বিবর্ণ ব্যাটিংয়ে রেকর্ড ব্যবধানে হার, হোয়াইটওয়াশড বাংলাদেশ
ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছাড়াল তিনশ। আরেক দফা ক্যাচ মিসের মহড়ায় বিফলে গেল তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেনের শুরুর দিকের দুর্দান্ত বোলিং। এরপর বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিশা খুঁজে পেলেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যে উইকেটে রানের ফোয়ারা ছোটাল স্বাগতিকরা, সেখানেই রীতিমতো খাবি খেলেন তারা। ম্যাট হেনরির পর জিমি নিশামের নৈপুণ্যে অল্প রানে গুটিয়ে গেল সফরকারীরা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তামিম ইকবালের দল হলো হোয়াইটওয়াশড।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতীয় ক্রিকেট দল পারেনি দারুণ কিছু করে দেখাতে। ওয়েলিংটনে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে তারা হেরেছে ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান তোলে কিউইরা। জবাবে ৪২.৪ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৫৪ রানে। সব সংস্করণ মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে এটি টাইগারদের ২৯তম হার।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। সব ভেন্যু বিবেচনায় নিলে ফিরে যেতে হবে ১৯ বছর আগে। শ্রীলঙ্কায় কলম্বোয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্ল্যাকক্যাপসরা জিতেছিল ১৬৭ রানে। তাদের ৯ উইকেটে ২৪৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে গুটিয়ে গিয়েছিল মোটে ৭৭ রানে।
এদিন জবাব দিতে নেমে পেসার হেনরির তোপে পড়ে বাংলাদেশ। ৭ ওভারের মধ্যে দলীয় ২৬ রানে বিদায় নেন তিন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় এই ধাক্কা আর সামলে ওঠা হয়নি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন অধিনায়ক তামিম। হেনরির পরের ওভারে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে তালুবন্দি হন সৌম্য। দুজনেরই সংগ্রহ ১ রান করে।
হেনরির তৃতীয় শিকার হন সিরিজ জুড়ে হতাশ করা লিটন। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বেশ স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছিল। কিন্তু পুল করতে গিয়ে হলো গড়বড়। ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে গেল অনেক উপরে। এরপর ট্রেন্ট বোল্ট থার্ড ম্যানে নেন চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ। ২১ বলে ৩ চারে লিটনের রান ২১। ভীষণ চাপে পড়ায় মাটি কামড়ে উইকেটে থাকার প্রচেষ্টা ছিল মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিমের। এতে রান রেটে এক পর্যায়ে তিনের নিচেও নেমে যায়।
আগের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মিঠুন হঠাৎ আগ্রাসী হতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন। কাইল জেমিসনকে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তিনি। তার সংগ্রহ ৩৯ বলে ৬ রান। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে তার জুটিটা ছিল ৬৯ বলে ২২ রানের! এরপর বাংলাদেশের হন্তারক হিসেবে আবির্ভূত হন পেস অলরাউন্ডার নিশাম। তার শর্ট বল ঠিকমতো বুঝতে না পেরে ফিরতি ক্যাচ দেন মুশি। অনেকটা সময় উইকেটে থেকে ৪৪ বলে ২১ রান করেন তিনি। ২ বলের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজকে আউট করেন নিশাম।
নিজের পরের ওভারে শেখ মেহেদী হাসানকেও মাঠছাড়া করেন নিশাম। পুল করতে ব্যর্থ হওয়ায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ যায় তার। ৮২ রানে ৭ উইকেট হারানোয় বাংলাদেশের হার হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার। তবে নিউজিল্যান্ডের জয়ের অপেক্ষা কিছুটা দীর্ঘ করেন মাহমুদউল্লাহ। ৭৩ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ৪ ছক্কা।
কোটার শেষ ওভারে তাসকিনকে ফেরান হেনরি। লেগ সাইডে স্লগ করতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে কনওয়েকে ক্যাচ দেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ৯ রান। নবম উইকেটে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় বাংলাদেশ। রুবেলকে সঙ্গী করে মাহমুদউল্লাহ তোলেন ৫৯ বলে ৫২ রান। সেখানে রুবেলের অবদান মোটে ৪ রান। তাকে উইকেটরক্ষক-অধিনায়ক টম ল্যাথামের গ্লাভসবন্দি করার পর মোস্তাফিজুর রহমানকে এলবিডব্লিউ করে শেষটা রাঙান নিশাম।
ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে নিশাম ৫ উইকেট নেন ২৭ রানে। ৪ উইকেট শিকার করতে হেনরিরও খরচা ২৭ রান। আরেক পেসার জেমিসন ৩০ রানে পান বাকি উইকেটটি।
এর আগে ৫৭ রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে বিবর্ণ বোলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং মিস। ফলে নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে যায়। সুযোগ কাজে লাগিয়ে কনওয়ে ও মিচেল দুজনেই তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অভিষেক সেঞ্চুরি।
১১০ বলে ১২৬ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলেন কনওয়ে। তার ইনিংসে ছিল ১৭ চার। মিচেল ৯২ বলে অপরাজিত থাকেন ঠিক ১০০ রান। তিনি হাঁকান ৯ চার ও ২ ছক্কা। পঞ্চম উইকেটে তারা যোগ করেন ১৫৯ রান। তাদের আগ্রাসনে শেষ ১০ ওভারে ১০৭ রান তোলে কিউইরা। সিরিজে প্রথমবার একাদশে থাকা রুবেল ৭০ রানে নেন ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩১৮/৬ (গাপটিল ২৬, নিকোলস ১৮, কনওয়ে ১২৬, টেইলর ৭, ল্যাথাম ১৮, মিচেল ১০০*, নিশাম ৪, স্যান্টনার ৩*; মুস্তাফিজ ১/৮৭, তাসকিন ১/৫২, রুবেল ৩/৭০, মেহেদি ০/৪৬, মিরাজ ০/২৩, সৌম্য ১/৩৭)
বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ (তামিম ১, লিটন ২১, সৌম্য ১, মিঠুন ৬, মুশফিক ২১, মাহমুদউল্লাহ ৭৬*, মিরাজ ০, মেহেদী ৩, তাসকিন ৯, রুবেল ৪, মোস্তাফিজ ৩; হেনরি ৪/২৭, বোল্ট ০/৩৭, জেমিসন ১/৩০, নিশাম ৫/২৭, মিচেল ০/২৫, স্যান্টনার ০/৭)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ওয়ানডের সিরিজে নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ডেভন কনওয়ে।
ম্যান অব দ্য সিরিজ: ডেভন কনওয়ে।
Comments