হরতাল চিত্র

হেফাজতে ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের প্রভাব দেশের প্রধান জেলা শহরগুলোতে জোড়াল প্রভাব না পড়লেও দেশের অনেক স্থানে সরকার সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। ছবি: স্টার

হেফাজতে ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের প্রভাব দেশের প্রধান জেলা শহরগুলোতে জোড়াল প্রভাব না পড়লেও দেশের অনেক স্থানে সরকার সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সংঘর্ষে চার জন নিহতের পর থেকে ইট-সিমেন্টের দেয়াল তুলে ব্যারিকেড দিয়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন মাদ্রাসাছাত্ররা।

হরতালে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটিগামী যান চলাচল। 

হাটহাজারী-রাঙামাটি সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। বন্ধ রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে দেখা যায় স্থানীয় তরুণদের। ছবি: রাজিব রায়হান

সরে জমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরে হরতালের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। নগরীর ভেতরে যানবাহন চলাচল করেছে। তবে, নিয়মিত দিনের চেয়ে কম। হরতাল সমর্থকদের উপস্থিতি নগরীর ভেতরে লক্ষ্য করা যায়নি।

তবে, পটিয়ায় হেফাজতের বাধায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যানচলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে আজ দুপুর ৩টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি নিজেদের সভা শেষে জানিয়ে দেবেন।

বিভিন্ন থানায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের হামলার বিষয়টি প্রত্যাখান করে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিলে, বিশেষ করে ওসি রফিক বিনা উস্কানিতে গুলি করে চার জনকে হত্যা করেছে। সারাদেশে আরও অনেকে নিহত হয়েছেন। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকাসহ হাজার হাজার মানুষ আহত।’

রাঙামাটি-খাগড়াছড়িগামী ট্রাক হরতালের কারণে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় আটকে পড়ে। ছবি: মোস্তাফা ইউসূফ

তিনি আরও বলেন, ‘এটা মামুলি বিষয় নয়। এ কারনে হরতালের ডাক দিয়েছি। স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হচ্ছে। সারাদেশের আলেম-ওলামারা সাড়া দিয়েছেন। এ কারনে জনগণকে, আলেম-ওলামাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। এভাবে ইসলামের প্রতি অন্যায় হলে আমরা ঝাপিয়ে পড়ব৷ আমরা বাধ্য হয়ে হরতাল দিয়েছি।’

আহতদের ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা

রাজধানীর লালবাগ, পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, মোহাম্মদপুর, বসিলা, সাত মসজিদ এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম।

পল্টন এলাকায় হরতালের সমর্থনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে। হরতালের সমর্থনে হাতে লাঠি-সোটা নিয়ে মিছিল বের করে হেফাজতে ইসলাম। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের করে তারা জিপিও মোড়ের দিকে যায়। এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি মিছিল বিপরীত দিক থেকে আসলে তারা মুখোমুখি হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পরে হেফাজতের মিছিলটি নয়াপল্টন হয়ে পুনরায় বায়তুর মোকাররমের সামনে ফিরে আসে এবং সেখানে সমাবেশ করে।

রাজধানীর পল্টন এলাকায় হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: মুন্তাকিম সাদ

রাজধানীর লালবাগ এলাকায় হরতাল সমর্থকরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা সকাল ৭টা থেকে টায়ার জ্বালিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকরা। ছবি: স্টার

বসিলা ব্রিজ এলাকাও প্রায় ২ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা।

মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাত মসজিদ এলাকা অবরোধের চেষ্টা করলে সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে হরতাল সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সিলেট

সিলেটে সকাল থেকে হরতাল পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও দুপুর থেকে কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ভোর থেকেই সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছাড়েনি। নগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথে যান চলাচলে বাঁধা দিয়েছে হেফাজত কর্মীরা। এসময় তাদের হাতে বাঁশ, রডসহ ধারালো অস্ত্র দেখা যায়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় হেফাজত সমর্থককের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কর্মী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। 

সিলেটের মেন্দীবাগ এলাকায় হরতালের সমর্থনে লাঠি-সোটা নিয়ে রাস্তায় হেফাজতের নেতা কর্মীরা। ছবি: শেখ নাসির

রাজশাহী

আমাদের রাজশাহী প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সকাল থেকে রাস্তাঘাটে যান চলাচল অব্যহত রয়েছে। দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। স্থানীয় দোকানপাট, বাজারগুলো খোলা রয়েছে। তবে রাস্তায় বা বাজারে মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য সাধারণ দিনের তুলনায় কম।

ঢাকা বাস সার্ভিস ন্যশনাল ট্রাভেলসের কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানিয়েছেন, ‘আজ যাত্রী সংখ্যা শতকরা ৪০ ভাগের মতো কমে গেছে।’ 

রাজশাহীর ভদ্রা মোড়। ছবি: আনোয়ার আলী

খুলনা

খুলনায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের খুলনা সংবাদদাতা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড থেকে সকালে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মোংলা, পিরোজপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলকায় যানবাহন ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। খুলনা শহরের অভ্যন্তরে প্রতিদিনের ন্যায় ইজিবাইক ও মাহেন্দ্রা স্বাভাবিকভাবে চলতে দেখা গেছে। 

খুলনায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ছবিটি সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে নেওয়া। ছবি: দীপংকর রায়

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. তাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গাড়ি চলাচলে কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি। শহরের ভেতরে ও শহরের বাইরে স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চলাচল করছে।’

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকেই বাস চলাচল স্বাভাবিক রেখেছি। খুলনা থেকে সব রুটে বাস ছেড়ে গেছে।’

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সকাল থেকে আন্তঃনগর রকেট, চিত্রা ও কপোতাক্ষ ছেড়ে গেছে।’

ময়মনসিংহ

আমাদের ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জেলায় সকাল থেকে বাস চলাচল করছে। তবে বাস ও যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, দুই-এক জায়গায় হরতাল সমর্থকরা বাধা দিলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বিভাগীয় শহরে অধিকাংশ দোকানই খোলা দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলা দোকানের সংখ্যাও বাড়ছে।

রেলওয়ে পুলিশের ওসি মামুন রহমান জানয়েছেন, ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।

রংপুর-দিনাজপুর

রংপুর বিভাগের সবগুলো জেলাতে ঢিলেঢালাভাবে চলছে হেফাজতে ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। আজ রোববার সকাল থেকেই চলছে যানবাহন, খুলেছে দোকানপাট ও অফিস আদালত।

আন্তঃজেলা বাসসহ সড়ক-মহাসড়কে স্বাভাবিক রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল।

পার্বতীপুর জংশনের ষ্টেশন মাস্টার জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন, সকাল থেকে নির্ধারিত সবকটি ট্রেন সময়মতো চলাচল করছে। এখন পর্যন্ত সব স্বাভাবিক আছে।

দিনাজপুর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, সবকটি রুটে সকাল থেকে বাস চলছে।

সম্মিলিত কওমি মাদরাসা পরিষদের রংপুর জেলা সভাপতি হেফাজত ইসলামের নেতা হাফেজ ইদ্রীস আলী জানান, আজ তাদের আর কোনো কর্মসূচি নেই। বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। এ কারণে রোববার কোনো কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে না।

এদিকে, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, হরতালের সমর্থনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওয়া চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে। ছবি: স্টার

গাজীপুর

গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ও দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। দূরপাল্লার তুলনায় স্থানীয় যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চলাচল ছিল বেশি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় রোববার বেলা অনুমানিক ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। হরতালের বিপক্ষে বিভিন্নস্থানে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার থেকে গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল পর্যন্ত চলাচলকারী যাত্রীবাহী ‘তাকওয়া’ পরিবহনের চালক জহিরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্যান্য দিনের মতো সকাল থেকেই একাধিকবার যাতায়াত করেছি। কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি। তবে দূর পাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন খুব কম। হঠাৎ দু-একটা দূরপাল্লার যানবাহন দেখা গেছে।’

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। জেলার কোথাও অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মুন্সিগঞ্জ

আমাদের মুন্সিগঞ্জ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জেলার সিরাজদিখান উপজেলার শৈলপুর এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জালাল উদ্দিন, এসআই সেকেন্দার আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য।

আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার বড় শিকারপুর ও শুলপুর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সকালে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কুচিয়ামোড়া ও নিমতলি এলাকায় অবস্থান করে অবরোধের চেষ্টা করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হেফাজত নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়।

এরপর নিকটস্থ বড় বড়শিকারপুর ও শুলপুর এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও ইটপাটকেল ছোড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর ও তিনটি মোটরসাইকেল ও আগুন দেওয়া হয়।

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ সব স্থানীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাজাসহ জেলা আওামীলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

চৌমুহনী-ফেনী সড়কের পূর্ব বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তা সরিয়ে দেয় পুলিশ। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার

নোয়াখালী

নোয়াখালীতে হরতাল বিচ্ছিন্নভাবে পালিত হচ্ছে। হরতালের সমর্থনে আজ ভোর থেকে জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট যানবাহন চলাচল করলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলা থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। তবে রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে।

জেলার সোনাইমুড়িতে হরতালের পক্ষে পিকেটিং করার সময় পুলিশ হেফাজতের দুই কর্মীকে আটক করেছে। নাশকতা এড়াতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার ও সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থককারীরা। আজ রোববার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ পৈরতলা এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা ও ভাঙচুর করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকরা। ইটপাটকেলের আঘাতে ট্রেনের ভেতরে থাকা অন্তত ১০ যাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়াও ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে রেললাইনে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শোয়েব আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রেললাইনে ব্যারিকেড দেওয়ায় আপাতত ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-নোয়াখালী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভূমি অফিসে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ছবি: মাসুক হৃদয়

নারায়ণগঞ্জ

ভোর ৬টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহসড়ক অবরোধ, টায়ারে আগুন ও বিক্ষোভ মিছিলের মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালন করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।

সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড সানারপার এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) ও পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক দোকানের কর্মচারী। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সরেজমিনে শহরে দেখা যায়, ভোর ৬টা থেকেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ভোর থেকে যানবাহন কিছুটা কম চলাচল করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চলাচল বাড়ছে। এছাড়া, নাশকতা ঠেকাতে শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ ডিআইটি রেলওয়ে জামে মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। শহরের ভেতরে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

ভোর ৬টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহসড়ক অবরোধ, টায়ারে আগুন ও বিক্ষোভ মিছিলের মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালন করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ছবি: স্টার

সকাল সাড়ে ৭টায় ডিআইটি মসজিদের সামনে ১৫ থেকে ২০জন নেতাকর্মী মিছিল বের করলেও পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে মসজিদের ভেতর থেকে হরতাল সমর্থনে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের স্লোগান শোনা যায়।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হরতালে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য জেলায় পুলিশের ৮৮৫ সদস্যসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় টহল দিচ্ছে।’

বাগেরহাট

হেফাজতের হরতালের প্রভাব পড়েনি বাগেরহাটে। স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল।

বাগেরহাট বাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক খান আবুবকর সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাগেরহাটে হেফাজতের হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। আমাদের বাস শ্রমিক ও চালকরা যান চলাচল স্বাভাবিক রেখেছে। বাগেরহাটের ১৬টি রুটেই যান চলাচল স্বাভাবিক।’

Comments

The Daily Star  | English
Islami Bank's former managing director Abdul Mannan

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

7h ago