জিকে সেচ প্রকল্পে স্বল্পমাত্রায় পানি সরবরাহ শুরু

এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর স্বল্পমাত্রায় চালু হয়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে)।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পাম্প চালানো সুইচ শূন্য থেকে ভ্যান অ্যাঙ্গেল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে করে সেচ পানির প্রবাহ ১০ শতাংশের স্থলে আজ সকালে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
আগমীকাল সকালের মধ্যেই পানির প্রবাহ ১০০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলেও যোগ করেন তিনি।
পদ্মায় পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় গত ২৬ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ।
মিজানুর রহমান জানান পাম্প হাউসের ইনটেক চ্যানেলে এখনো চার দশমিক চার মিটার আরএল (রিডিউসড লেভেল) পানি পাওয়া যাচ্ছে। এতে ডিসচার্জ চ্যানেলের পানি সরবরাহ ১৪ দশমিক তিন মিটার আরএল হয়েছে। ১৪ দশমিক পাঁচ মিটার আরএল হলে পূর্ণমাত্রায় সেচ সরবরাহ করা যায়।
তিনি জানান, পাম্প চালু রয়েছে। পদ্মায় পানি বাড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পাম্পের ভ্যান অ্যাঙ্গেল বেড়ে যাবে।
যৌথ নদী কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন ৩৫ হাজার কিউসেক (প্রতি সেকেন্ডে এক ঘনফুট) পানি পাচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে বাংলাদেশ।
এতে আরও বলা হয়, আগের ১১ দিন অর্থাৎ ২০ মার্চ থেকে ভারত একইভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি নিয়েছে। গঙ্গা চুক্তি মোতাবেক সেই সময় বাংলাদেশের প্রাপ্যতা ছিল মাত্র ২৩ হাজার ৫৪৪ কিউসেক পানি।
পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল এই প্রকল্পের আওতায় দুটি মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এই চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় এই কার্যক্রম বিস্তৃত।
জিকে সূত্র জানায়, ১৫ জানুয়ারি সেচ পাম্প চালু করা হয়েছিল। এই পাম্পগুলো একযোগে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর কথা ছিল।
কিন্তু পদ্মায় পানি একেবারে কমে যাওয়ায় গত ২৬ মার্চ পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল মাত্র ২৩ হাজার কিউসেক। যার ফলে জিকের ইনটেক চ্যানেলে পানি থাকে মাত্র চার দশমিক এক থেকে চার দশমিক ১৮ মিটার আরএল পর্যন্ত। চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলের নিচে নামলেই পাম্প মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যায়।
পদ্মার পানির স্তর কমে যাওয়ার কারন, ভারতের গঙ্গা থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া। ঐতিহাসিক পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ফারাক্কায় পানি প্রবাহ ছিল ৫৯ হাজার ৫২২ কিউসেক এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৩৬ হাজার ৩৯৩ কিউসেক।
গত ২০ মার্চ থেকে শুরু হয় ভারতের প্রাপ্যতা। ফলে ভারত গঙ্গা থেকে পানির হিস্যা নিয়ে নেয়। ভারতের এই পানি প্রত্যাহারের সাইকেলটি শেষ হয় ৩১ মার্চ। এটি পুনরায় ভারতের পক্ষে যাবে আগামী ১০ এপ্রিল।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গঙ্গা অববাহিকায় পানি নিয়ে এবার সমস্যা একটু বেশী দেখা দিয়েছে। যার প্রধান কারন বৃষ্টির অপ্রাপ্যতা। এই মৌসুমে এখনও বৃষ্টি হয়নি। ফলে গঙ্গায় পানির মূল প্রবাহ খুবই দুর্বল। পানি বন্টন করতে গিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে।
জিকে প্রকল্পের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ঐতিহাসিক পানি চুক্তির পর থেকে জিকে পাম্পে পানির দুস্প্রাপ্যতা তৈরি হয়নি। এবার এমনটি হওয়ার প্রধান কারন বৃষ্টির সহায়তা না পাওয়া। জিকের ইনটেক চ্যানেল পানিপূর্ণ রাখতে সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় প্রতি বছর।’
সেচের পানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক হয়ে যাবে দু-এক দিনের মধ্যেই।’
এদিকে পাম্প চালু হওয়ার খবরে আশ্বস্ত হয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘ধানে এখন থোড় আসার সময়। এখন জমিতে মুঠোডোবা পানি প্রয়োজন। এতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।’
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবায়রা গ্রামের কৃষক হারুন আলী বলেন, ‘আমার জমি তীব্র পানির আকালে (অভাব) ছিল গত কয়েকদিন। পানি আসায় স্বস্তি পেয়েছি।’
আরও পড়ুন:
Comments