অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়ায় অনিশ্চয়তা: অন্য উৎস খুঁজছে সরকার

ছবি: রয়টার্স

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান পাওয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় অন্যান্য উদ্ভাবকদের কাছ থেকে টিকা কেনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার।

ইতোমধ্যে সরকার ঢাকায় নিযুক্ত চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিবিআইবিপি-করভি ও স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে কথা বলেছে।

বিবিআইবিপি-করভি ভ্যাকসিন চীনের সিনোফার্ম, আর স্পুটনিক-ভি রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে।

দুটি ভ্যাকসিনই ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পেয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনো এই দুটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়নি।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সম্প্রতি আমি ব্যক্তিগতভাবে চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদেরকে জানিয়েছি, বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনতে আগ্রহী।’

‘আমি তাদেরকে বলেছি ভ্যাকসিনের মূল্য, পরিমাণ, শর্তাবলী ও সরবরাহ করতে কত সময় লাগবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে’, বলেন তিনি।

মন্ত্রী আরও জানান, দুটি ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার কাজের জন্যে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

‘আমরা এখন তাদের উত্তরের অপেক্ষায় আছি’, বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সিনোফার্ম জানায়, তাদের ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরপরই চীন সরকার ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ডিসেম্বরেরই শুরুর দিকে সিনোফার্ম ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয় আরব আমিরাত। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের অন্তর্বর্তীকালীন ফলের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ৮৬ শতাংশ।

নিজ দেশের ভেতরে ব্যবহারের জন্য ২০২০ সালের আগস্টে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় রাশিয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহামারির সময়ে রাশিয়া ও চীনের বানানো ভ্যাকসিন লাখো মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। এই ভ্যাকসিনগুলো বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে। (বাংলাদেশ) সরকার খুব ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে।’

স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা। কিন্তু, গতকাল পর্যন্ত সরকার দুই দফায় মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন রপ্তানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত।

এ ছাড়াও, ভারত থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন গত ২১ জানুয়ারি এসেছে। আর গত মাসে বাংলাদেশে সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপহার হিসেবে আরও ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এনেছেন।

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় চালানটি কবে এসে পৌঁছাবে, সে বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।

এ বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালানটি কবে আসবে, আমরা এখনো সেটির সুনির্দিষ্ট তারিখ জানতে পারিনি। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব।’

ডব্লিউএইচও ও গ্যাভির নেতৃত্বাধীন কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ মোট ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে। এই কর্মসূচির আওতায় মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের এক কোটি নয় লাখ আট হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কোভ্যাক্সের কাছ থেকে এখনো কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।

ভ্যাকসিনের মজুত দ্রুত কমতে থাকায় ও সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সময়মতো পরবর্তী চালান পাওয়ার অনিশ্চয়তার প্রভাব বর্তমানে চলমান টিকাদান কর্মসূচির ওপর পড়তে পারে। তবে, সরকার দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমরা একটি মিটিং করেছি এবং আমরা কর্মসূচিটিকে দেশব্যাপী অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। আমরা সবাইকে প্রথম ডোজও দিতে থাকব।’

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হবে।

এখন পর্যন্ত সরকার ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭২ জনকে টিকা দিয়েছে। আর মোট ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ২২২ জন মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

13m ago