শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯, এখনো নিখোঁজ ৭
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ আছেন সাত জন।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় নিহতের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর শেষে এ তথ্য দেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক।
তিনি বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় রাত ২টা পর্যন্ত পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ২২ জনের মরদেহ এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে নদীতে ভাসতে থাকা নিখোঁজ আরও দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ঘোষণা অনুযায়ী নিহতের দাফন ও সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহযোগিতায় দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৩৬ জন নিখোঁজের অভিযোগ পেয়েছি। যার মধ্যে ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে এখনো সাত জন নিখোঁজ আছেন। আমাদের উদ্ধার কাজ রাত পর্যন্ত চলবে।’
নিহতরা হলেন- রুনা আক্তার (২৪), সোলেমান ব্যাপারী (৬০), বেবী বেগম (৬০), সুনিতা সাহা (৪০), পখিনা বেগম (৪৫), বীথী (১৮), আরিফ (১), প্রতিমা শর্মা (৫৩), শামসুদ্দিন (৯০), রেহেনা বেগম (৬৫), হাফিজুর রহমান (২৪), তহমিনা (২০), আব্দুল্লাহ (১), নারায়ণ দাস (৬৫), পার্বতী রানী দাস (৪৫), আজমীর (২), শাহ আলম মৃধা (৫৫), মহারাণী (৩৭), আনোয়ার হোসেন (৫৫), মাকসুদা বেগম (৩০), সাউদা আক্তার লতা (১৮), আব্দুল খালেক (৭০), জিবু (১৩), খাদিজা বেগম (৫০), মোহাম্মদ নয়ন (২৯), সাদিয়া আক্তার (৭), বিকাশ সাহা (২২) ও মানসুরা (৭ মাস) ও অজ্ঞাত এক নারীকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান স্বজনরা।
এখনো নিখোঁজ আছেন- অনিক সাহা (১২), মো. জাকির (৪৫), জাকির হোসেন (৪৫), তানভীর হোসেন হৃদয়, রিজভী (২০), মো. ইউসুফ কাজী, মো. সোহাগ হাওলাদার (২৩)।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘খারাপ আবহাওয়ার জন্য গতকাল রাতে উদ্ধারকাজ ব্যহত হয়। এজন্য লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সোমবার সকালে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ দুপুর ১টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করে। লঞ্চের ভেতর থেকে ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো কয়েকজন নিখোঁজ আছেন বলে স্বজনরা দাবি করছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা ট্রলার দিয়ে আশপাশেও খোঁজ করব। এ ছাড়াও, মাইকিং করা হবে যদি কেউ কোন মরদেহেরে সন্ধান পায় তাহলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।’
লঞ্চ উদ্ধারে সহযোগিতা করেন- নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ, বন্দর থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, আনসার সহ রেড ক্রিসেন্টের সেচ্ছাসেবকেরা।
লঞ্চডুবির ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মৃণাল কান্তি দাস, বিআইডব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সেই কার্গো জাহাজটি শনাক্ত ‘এসকেএল-৩’
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এসকেএল-৩ নামের কোস্টার ট্যাংকারের (কার্গো জাহাজ) ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামের নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
শিগগির মামলা করবে মালিক সমিতি ও পুলিশ
নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেখানে অবশ্যই মামলা করা হবে। আমরা শিগগির মামলা করব।’
নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার ওসি শহীদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ট্যাংকার জাহাজটি লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই জাহাজটিকে তাৎক্ষণিক ধরা যায়নি। তবে, এ বিষয়ে আইনগত উদ্যোগ নেওয়া হলে আমরা জাহাজটি আটকে অভিযানে নামব। শিগগির জাহাজটিকে আটকের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
আরও পড়ুন:
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: আরও ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার, মোট ২৭
নারায়ণগঞ্জ: ডুবে যাওয়া লঞ্চ এখনো তোলা যায়নি
Comments