‘হামরা দিন আনি দিন খাই’

‘লকডাউন গরিবের জন্য এক অভিশাপের নাম’

কালবৈশাখী ঝড়ে কখন যে চার জনের আশ্রয় এক চালা ঘরটি ভেঙে পরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দিন এনে দিন খাওয়া দুলাল হোসেন-মহিমা বেগমের সংসারে এখন কেবলই অনিশ্চয়তা। ছবি: স্টার

‘হামরা দিন আনি দিন খাই। হামার কোনো জমানো টাকা নাই যে হামরা তাক ভাঙে ভাঙে খামো।’ এভাবেই কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট পৌরসভার নওগাজী মাঝার এলাকার ফেরিওয়ালা দুলাল হোসেন (৪৬)।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগের বছরের লকডাউনের ধাক্কায় এ্যালাং সারি উঠবার পাং নাই। তার ওপর ফির লকডাউন দিছে। এ্যালা যে হামার কী হইবে আল্লাহ ছাড়া কাইও জানে না।’

দুলাল আরও বলেন, ‘হামনরাগুলা গরিব মানুষ আরও গরিব হয়া যাবার নাগছোং। হামার বাঁচার কোনো উপায় নাই এ্যালা।’

পথেঘাটে ফুটপাতে চানাচুর, আচার, বাদাম ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করা দুলাল হোসেন জানান, গত বছর লকডাউনে তিনি ঘরের চাল থেকে ছয়টি টিন বিক্রি করে সংসার খরচ চালিয়েছেন। ঘরের খুঁটি লাগানো ও মেরামতের জন্য চার হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। সে টাকাও ব্যয় করে ফেলেছেন সংসারের কাজে। এবার লকডাউনে তিনি নিরুপায় হয়ে পরেছেন। বিক্রি করার মতো আর কিছুই নেই, হাতে জমা টাকাও নেই। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে কীভাবে লকডাউনের দিনগুলো কাটবে সে চিন্তায় তিনি বিভোর। পাচ্ছেন না কোনো সমাধান।

দুলালের স্ত্রী মহিমা বেগম (৪০) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। কখন যে তাদের এক চালা ঘরটি মাটিতে লুটিয়ে পরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঘর মেরামত করতে পারছেন না, খুঁটি লাগাতে পারছেন না। এর মাঝে লকডাউন তাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে।

তিনি বলেন, ‘হামারগুলার প্যাটোত ভাতই জোটে না। করোনা হামাকগুলাক ফকির করি দেইল। হামরা এ্যালা ক্যাং করি বাইচমো।’

পৌরসভার উত্তর সাপ্টানা এলাকার বিধবা কান্দ্রি বালা (৬২) জানান, গত বছরের লকডাউনে তার রিকশাচালক ছেলে ২০ হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পরে। এখনও সেই টাকা শোধ করতে পারেনি। এবার লকডাউনে তাদের সংসার চালাটাই দুষ্কর হয়ে পরেছে।

তিনি বলেন, ‘হামার একটা গরু আছিল সেটাও বেচায়া দিছোং। গরু বেচা টাকা ভাঙি ভাঙি সংসারোত নাগাইছি। বাজারে জিনিসপাতির যে দাম তাতে হামার গরিব মাইনসের মরণ ছাড়া আর কিছু নাই।’

কান্দ্রি বালার ছেলে সুদান চন্দ্র (৪৪) জানান, রাস্তাঘাটে যাত্রী নেই। তাই রিক্সা নিয়ে বের হয়েও আয় করতে পারছেন না। প্রতিদিনের রোজগারে তাকে সংসার চালাতে হয়। রোজগার না থাকলে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়। এ অবস্থায় পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে তাকে সুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে।

শহরের শাহজাহান কলোনির দিনমজুর নবির হোসেন (৫৩) জানান, করোনায় লকডাউন গরিব মানুষের জন্য সর্বনাশ আর বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীদের জন্য পৌষ মাস।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনে জিনিসপাতির দামও বেড়ে যায়। গত বছরের লকডাউনের ক্ষতিই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আবার এখন লকডাউনে আমাদের জীবন কষ্টদায়ক করে তুলেছে।

শহরের স্টেশন রোডের চায়ের দোকানদার জালার উদ্দিন (৪৪) বলেন, ‘আগের লকডাউনে শুধু চরা সুদে ঋণ নিয়ে চলতে হয়েছে। এতদিন রোজগার করে সেই সুদের টাকা পরিশোধ করছিলাম। আবার লকডাউনে সেই রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে।’

করোনা পরিস্থিতি গরিবকে আরও গরিব করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লকডাউন গরিবের জন্য এক অভিশাপের নাম।’

Comments

The Daily Star  | English

25 arrested so far in connection with Gopalganj violence: home adviser

"The agencies had information, but not about the extent of the violence"

25m ago