এমবাপে-নেইমারের নৈপুণ্যে বায়ার্নের বিপক্ষে পিএসজির রোমাঞ্চকর জয়
ম্যাচের প্রথম আধা ঘণ্টায় দুই গোলে এগিয়ে গেল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। দুটিতেই অবদান রাখলেন নেইমার। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাধারী বায়ার্ন মিউনিখ হাল ছাড়ল না। ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা সমতায় ফিরল দারুণভাবে। রোমাঞ্চকর এই লড়াইয়ে ব্যবধান গড়ে দিলেন কিলিয়ান এমবাপে। তার দ্বিতীয় গোলে জয় নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল প্যারিসিয়ানরা।
বুধবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে হেরে গেছে বায়ার্ন। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ৩-২ গোলের মধুর জয় পেয়েছে ফরাসি লিগ ওয়ানের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। সফরকারীদের হয়ে নজরকাড়া নৈপুণ্য দেখান ফরাসি স্ট্রাইকার এমবাপে ও ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার। কৃতিত্ব প্রাপ্য কোস্টারিকান গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের। মোট দশটি সেভ করেন তিনি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গত মৌসুমের ফাইনালে পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বায়ার্ন। ষষ্ঠবারের মতো ইউরোপের সেরা ক্লাব হওয়ার উল্লাস করেছিল তারা। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল পিএসজির। সেই যন্ত্রণার প্রতিশোধ নেওয়ার অভিযানের প্রথম পর্বটা সফলতার সঙ্গে শেষ করেছে মরিসিও পচেত্তিনোর দল।
চোট পাওয়া তারকা স্ট্রাইকার রবার্ত লেভানদভস্কির অভাব ভালোভাবে টের পেয়েছে বায়ার্ন। বল দখলে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি গোটা ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলমুখে ৩১টি শট নেয় তারা। যার মধ্যে ১২টি লক্ষ্যে থাকলেও হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যদের। অন্যদিকে, পিএসজির ছয়টি শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বায়ার্ন। লুকাস হার্নান্দেজের জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন নাভাস। পরের মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় পিএসজি। এরিক-ম্যাক্সিম চুপো মোটিংয়ের হেড বাধা পায় ক্রসবারে। উল্টো পাল্টা আক্রমণে কিছুক্ষণ পরই এগিয়ে যায় অতিথিরা। নেইমারের পাসে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। গোল হজমে দায় আছে বাভারিয়ানদের গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যারের। বল তার সোজাসুজি থাকলেও তিনি রুখতে পারেননি।
নবম মিনিটে দলকে সমতায় ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন টমাস মুলার। তিন মিনিট পর পিএসজির ইউলিয়ান ড্রাক্সলার নিশানা ভেদ করেছিলেন। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি। ১৯তম মিনিটে নাভাসের দৃঢ়তায় জাল অক্ষত থাকে পিএসজির। জশুয়া কিমিচের ফ্রি-কিকে লিয়ন গোরেটস্কার হেড অসামান্য দক্ষতায় ঠেকান তিনি। পরের মিনিটে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেঞ্জামিন পাভার্দকেও হতাশ করেন তিনি।
২৮তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে পিএসজি। নেইমার মাঝমাঠের কিছুটা সামনে থেকে উঁচু করে দেন অসাধারণ এক পাস। তাতে এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকদের রক্ষণভাগ। অরক্ষিত মার্কুইনোস একা পেয়ে যান নয়্যারকে। বাকিটা অনায়াসে সারেন তিনি। নয় মিনিট পর ব্যবধান কমায় বায়ার্ন। পাভার্দের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে সাবেক ক্লাবের জালে বল পাঠান চুপো মোটিং।
বিরতির পরও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে একই ধাঁচে চলতে থাকে খেলা। ৫২তম মিনিটে নেইমারকে গোলবঞ্চিত করেন নয়্যার। পরের মিনিটে ডেভিড আলাবা আর পাভার্দের দুটি প্রচেষ্টা ভেস্তে দেন নাভাস। সমতায় ফিরতে মরিয়া বায়ার্ন গোল পেয়ে যায় ৬০তম মিনিটে। কিমিচের আরেকটি ফ্রি-কিকে হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন মুলার।
বায়ার্নের স্বস্তি টেকেনি বেশিক্ষণ। আট মিনিট পরই ফের লিড নেয় পিএসজি। আনহেল দি মারিয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপে। এরপর দেখান পায়ের কারুকাজ। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে নেন নিখুঁত গড়ানো শট। নয়্যারের নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছুই যেন করার ছিল না! বাকি সময়ে চাপ বাড়িয়েও সমতায় ফেরা হয়নি বায়ার্নের। শেষদিকে হার্নান্দেজের শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। আলাবার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় অল্পের জন্য।
আগামী মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয় লেগে পিএসজির মাঠে খেলতে নামবে বায়ার্ন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাদের সামনে। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষের মাঠে তিন গোল করে জেতায় অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে পিএসজি।
Comments