নুসরাত হত্যার ২ বছর: পরিবারের দোয়া, পিবিআইয়ের শ্রদ্ধা

বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি।
2.jpg
নুসরাতের কবরে পিবিআইয়ের শ্রদ্ধা। ছবি: স্টার

বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি।

আজ দুপুরে পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকায় নিহত নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নুসরাত স্মরণে পরিবারের পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এখনো নুসরাতকে হারানোর শোকে মুহ্যমান। 

নুসরাতের কবরে পিবিআইয়ের শ্রদ্ধা

একইদিন বিকালে নুসরাতের কবর জিয়ারত করে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন ফেনী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম। পরে তারা নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

ফেনী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তে পিবিআই প্রথম থেকে শুরু করে রায় হওয়া পর্যন্ত যুক্ত ছিল। এখনো নুসরাতের পরিবারের যেকোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে পিবিআই সাধ্যমতো চেষ্টা করবে।’

‘নুসরাত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যে লড়াই করেছে, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা তার কবরে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছি’, বলেন তিনি।

এ বিষয়ে পিবিআইয়ের মহাপরিচালক ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, পিবিআই সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ফেনী ইউনিট নুসরাতের কবরে শ্রদ্ধা জানায়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা গত বছরও তার কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এ বছরও জানানো হলো। আসলে এ মামলার তদন্তে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে আমরা এক ধরনের আবেগে জড়িয়ে পড়েছিলাম।’

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তে আমাদের প্রায় ১১টির মতো ইউনিট একসঙ্গে কাজ করেছিল। মেয়েটির মৃত্যুতে নিজেদের পরিবারের কাউকে হারিয়েছি, আমরা এমন অনুভূতি নিয়ে কাজ করেছি।’

নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত পিবিআইয়ের জন্য একটি উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের শত শত মামলা দেখতে হয়। এ বছরও প্রায় এক লাখ মামলার তদন্তভার আমাদের হাতে। কিন্তু নুসরাত হত্যা মামলা আমাদের কাছে একটি উদাহরণ। আমরা বলি- ঘটনার সঙ্গে একাত্ম হতে না পারলে তদন্ত কাজ খুব একটা সহজ হয় না।’

1.jpg
নুসরাতের কবর জিয়ারত। ছবি: স্টার

বিচারের সর্বশেষ

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে সেসময় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় নুসরাতের পরিবার।

মামলার আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একই বছরের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ (ডেথ রেফারেন্স) অনুমোদনের জন্য  মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল।’

‘পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে শুনানি শুরু হতে দেরি হওয়ায় সে বেঞ্চ বাতিল হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় বেঞ্চ গঠন করে মামলার শুনানি শুরু হবে বলে আশা করছি’, বলেন তিনি।

পরিবারের বক্তব্য

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, তিনি আশা করছেন- নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার দণ্ডাদেশ দ্রুত কার্যকরের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই আসামিপক্ষের লোকজন আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে পুলিশি পাহারা না থাকলে তারা অনেক ক্ষতিসাধন করতো।’

বাড়িতে পুলিশি পাহারা অব্যাহত রাখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

3.jpg
নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছবি: স্টার

মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, নুসরাতের কবর সংরক্ষণে পাকাকরণ এবং তার নামে সড়ক নির্মাণ ও ভবনের নামকরণ করা হবে। যা দুই বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া, নুসরাতের নামে গঠিত নুসরাত ফাউন্ডেশনেরও কোনো অগ্রগতি নেই।’

এতে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ জন। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পরে ১০ এপ্রিল ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান।

নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন, হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ আব্দুল কাদের, মোহাম্মদ শামীম, ছাত্র নূর উদ্দিন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আব্দুর রহিম ওরফে শরীফ, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন ওরফে মামুন, ইফতেখার হোসেন ওরফে রানা এবং মহিউদ্দিন শাকিল।

আরও পড়ুন:

নুসরাত হত্যা মামলা: ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

নুসরাতের ভিডিও ওসি মোয়াজ্জেম নিজেই করেছিলেন

সোনাগাজীর সাবেক ওসির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা

নুসরাত হত্যা: সোনাগাজী উপজেলা আ. লীগ সভাপতি আটক

নুসরাত হত্যা: ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে চার্জশিট

Comments

The Daily Star  | English

Country must be back in business without delay

Amid worker unrest and insecurity in the industrial sector, entrepreneurs and bankers have urged the new administration to focus on rebuilding confidence in the economy.

2h ago