মামলা তদন্তে পুলিশের গাফিলতি, অবহেলার অভিযোগ
মামলা তদন্তে পুলিশের রহস্যজনক আচরণ ও নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রামে অপহরণের শিকার হওয়া অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে বলেছে, সিসিটিভিতে কিছু ক্লু পেয়েছে। এরপর বলছে ভিডিও ঝাপসা। এখন বলছে কিছু নেই। আমি বারবার তাদের ফোন দিয়ে খবর নিয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছি, কিন্তু সে রিসিভ করে না। পুলিশের বক্তব্যে আমি সন্তুষ্ট না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা তদন্তে পুলিশের গাফিলতি, অবহেলা আছে। আমি আদালতে সাধারণ ডায়েরি করেছি। সার্বিক বিষয় নিয়ে আমি নিজে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘আমি মামলার তদন্ত ভার অন্য সংস্থাকে হস্তান্তর করতে আদালতে আবেদন দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপহৃত হয়ে ফিরে আসার পর আমাকে নানান কৌশল অবলম্বন করে চলাচল করতে হচ্ছে। আমার গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত আমাকে ফলো করা হচ্ছে। আমাকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। স্থানীয় থানায় গেলেও তারা আমার জিডি নেয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘আমার মামলায় আসামি ছিল অজ্ঞাতনামা ছয় জন। মামলাটি এখন কোতোয়ালি থানায় তদন্তাধীন। এই মামলায় গত ১২ ডিসেম্বর দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের পর আসামিরা জামিন পান। কিন্তু তাদের এই গ্রেপ্তার ও জামিনে বের হওয়ার বিষয়ে মামলার বাদী আমি কিংবা সাংবাদিক ইউনিয়নের কোনো নেতৃত্ববৃন্দ অবগত ছিলেন না।’
দুই পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার এমন ভূমিকা অবশ্যই রহস্যজনক। আমি জানি না আমার অপহরণের রহস্য উদঘাটন হবে কি না। আমার ওপর করা অত্যাচারের বিচার পাবো কি না। আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।’
তার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করেছেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য মাননীয় ভূমি মন্ত্রীর ভাই জনাব আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অপরদিকে আনিসুজ্জামান চৌধুরীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চট্টগ্রাম “সিটি নিউজে” সংবাদ প্রকাশ সংক্রান্ত কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন।’
‘আমি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি,’ বলেন সরওয়ার।
তিনি বলেন, তার পারিবারিক শত্রু ও পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তৈরি শত্রু মিলে যোগসাজশে তাকে হত্যার চেষ্টা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তাকে চলার পথে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যা তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তবে, তদন্ত কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
সরওয়ার বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘটনার বিস্তারিত জানালে তিনি আমার সঙ্গে তেমন দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। তার এই আচরণে আমি বিস্মিত ও তার কথা শুনে আমি চরম আতঙ্কে রয়েছি এখনও। তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে বলেন, “রনির মতো মানুষ যদি কাউকে নেয় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় তারা আর ফিরে আসে না। অঙ্ক মিলছে না পুলিশের”’।
‘আমার সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেছে। আমার সংবাদ সাইটটি নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে। আমার প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলতে হুমকি দিলেও আমি সরাইনি। নিউজটি আমি একা করিনি। আরও কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিউজটি সরিয়ে ফেলে,’ যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গোলাম সরওয়ার একা উপস্থিত ছিলেন। এসময় তার সঙ্গে সাংবাদিক ইউনিয়নের কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে সরওয়ার বলেন, ‘আমাকে উদ্ধারে সিইউজে ও বিএফইউজের যে ভূমিকা তার জন্য তাদের কাছে আমি ঋণী। আমি আমার ওপর ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তাদের অবহিত করেছি। তবে তাদের কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখিনি। নেতৃবৃন্দের ভূমিকা কতটুকু সেটা আপনারা (সাংবাদিকরা) বিচার করেন।’
পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরওয়ারের মামলাটি তদন্তাধীন। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে এভাবে বলা দুঃখজনক। কারণ, আমরা মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’
অপহরণের তিন দিন পর সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে অজ্ঞান অবস্থায় গত ১ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে কে বা কারা সীতাকুণ্ডের কুমিরার হাজীপাড়া ব্রিজঘাট এলাকায় তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
আরও পড়ুন:
Comments