পরপর দুই বছর বৈশাখের বিক্রিতে মন্দা

pahela-baishakh-1.jpg
প্রতিবছর বৈশাখের আগে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ক্রেতায় পরিপূর্ণ থাকতে দেখা যেত। তবে করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর ধরে পরিচিত সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। ছবি: আমরান হোসেন

বাংলা বছরের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ টানা দুই বছর ধরে পোশাক ও মিষ্টি ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি, কারণ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অধিকাংশ ক্রেতা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।

সরকার বিধি-নিষেধ শিথিল করায় গত ৯ এপ্রিল থেকে দোকানপাট খুলে। কিন্তু রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ভয়ংকর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এবং মৃত্যুবরণ করায় অনেক ক্রেতাই দোকানে যাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন।

ঈদুল ফিতরের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম কেনাকাটার পর্ব ‘পয়লা বৈশাখ’ উপলক্ষে প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মালিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

বাড়তে থাকা সংক্রমণের হার বাংলা নববর্ষের উৎসবমুখর পরিবেশকে মলিন করে দিয়েছে।

যদিও অনেক দোকান ও শপিংমল খোলা আছে এবং অনেক ক্রেতাও আসছেন, তবুও ব্যবসার সার্বিক অবস্থা ভালো নয়।

দেশের অন্যতম প্রধান ফ্যাশন ব্র্যান্ড কে ক্রাফটের পরিচালক খালিদ মাহমুদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রির যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি, তা স্বাভাবিক সময়ের মতোই। প্রতি বছর বৈশাখের আগে আমরা যে অতিরিক্ত মৌসুমি বিক্রি দেখে অভ্যস্ত, এ বছর তা একেবারেই অনুপস্থিত।’

সরকারের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার ফলে জনসাধারণের মনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও কঠোর লকডাউনের ঘোষণাটি ছিল বিক্রেতাদের জন্য কফিনে শেষ পেরেক।

খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘোষণা আসার পর ব্যবসার সব সম্ভাবনা উড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছরের মোট বিক্রি অন্যান্য বছরে বৈশাখের অর্ধেকের সমপরিমাণ।’

আড়ংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আশরাফুল আলম বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগেও বিক্রির পরিমাণ ভালো ছিল।

‘তবে এক সপ্তাহের লকডাউনের খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্রি কমতে শুরু করে। ফলে, এ বছর আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারিনি’, বলেন তিনি।

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় সরকার ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেখানে অন্যান্য বিধি-নিষেধের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়।

দোকান মালিকদের প্রতিবাদের মুখে সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় এবং বিক্রেতারা বৈশাখের আগে তাদের পণ্যগুলো বিক্রি করার সুযোগ পান।

তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৩ জন। এটিই এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

সরকার গতকাল আরেকটি নির্দেশ জারি করেছে, যেখানে আগামীকাল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সব ধরনের অফিস ও যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং সব শপিংমল, দোকান, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

প্রায় দুই দশক ধরে তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের। তবে মহামারির প্রকোপে এ চাহিদার অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র সভাপতি শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘বৈশাখকে ঘিরে এ বছর বিক্রির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নিষেধাজ্ঞার কারণে সীমিত সময়ের জন্য দোকানপাট খোলা রাখতে পেরেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে, কোনো দোকানই গত কয়েকদিনে বলার মত বিক্রি করতে পারেনি।’

তবে কিছু ক্রেতা পয়লা বৈশাখ উদযাপনের জন্য কাপড় কিনতে শপিং মলগুলোতে গিয়েছেন। তাদেরই একজন মোহাম্মদ মারুফ।

ঢাকার গোপীবাগের বাসিন্দা মারুফ তার স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য কাপড় ও জুতা কিনতে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে গিয়েছিলেন। শপিংমলে তেমন ভিড় ছিল না।

যদিও রাজধানীর নিউ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, আগের দুদিনের চেয়ে গতকাল বেশি ক্রেতার দেখা পেয়েছেন।

‘আমাদের জন্য বিষয়টা ভালো। তবে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমত মেনে চলছেন না এবং এটি ঠিক নয়। ক্রেতাদের উচিৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমলে আসা’, বলেন তিনি।

বিভিন্ন শপিংমলের ব্যবসায়ীরা জানান, শেষ বিকাল ও সন্ধ্যার দিকে ক্রেতার সমাগম বেশি হয়।

স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সারা লাইফস্টাইল লিমিটেডের শোরুমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রেতার সমাগম হয়েছে।

সারা লাইফস্টাইলের পরিচালক শরীফুন্নেসা রেবা বলেন, ‘বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো ছিল।’

পয়লা বৈশাখের আগে মিষ্টি বিক্রেতারাও খুব একটা লাভ করতে পারেননি।

ওয়েল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ নুরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সারাদেশে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের মিষ্টি বিক্রি হয়।’

‘আমরা সাধারণত পয়লা বৈশাখের দিন এক কোটি টাকার মিষ্টি বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কিন্তু এবার উৎসব সামনে থাকলেও আমরা বিক্রির দেখা পাইনি। আমরা এ বছর কোনো মিষ্টির অর্ডার পাইনি’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago