গাজীপুরে ব্যাংকে উপচে পড়া ভিড়

লকডাউনের আগের দিন আজ মঙ্গলবার গাজীপুরের ব্যাংকগুলোতে ভিড় দেখা যায়। ছবি: স্টার

গাজীপুরের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে আজ মঙ্গলবার গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। করোনা সংক্রমণে ব্যাংক-বীমা বন্ধ ঘোষণার কারণে গ্রাহকদের ভিড় ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারগুলোতেও কেনাবেচার হিড়িক ছিল।

শ্রীপুর উপজেলার পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. সোহরাব হোসেন জানান, সকাল ১০টায় তিনি অগ্রণী ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে টাকা উঠাতে পারেননি।'

ভাংনাহাটী রহমানিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, তিনিও একই সময়ে এসে দুপুর ১টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে আবার ২টার দিকে এসে আরও এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে টাকা তুলতে পারেননি।

সকাল থেকে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান কবির।

পটকা সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক তোফায়েল আহমেদ ও অনেক গ্রাহকের মতো দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছেন সার্ভার কাজ করছে না।

সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখায় গিয়ে দেখা যায়, নগদ উত্তোলন ও জমাদানের সারিতে দীর্ঘ লাইন। উত্তোলনের সারির চাপ কমলে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারছেন।

নগদ জমাদানের সারিতে দাঁড়ানো আবুল কাশেম ডিমান্ড ড্রাফট করতে বেলা ১১টায় দাঁড়িয়েছেন। দুপুর পৌনে ২টায় তিনি ডিমান্ড ড্রাফটের টাকা জমা দিতে সক্ষম হন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মাসিক সঞ্চয়, ডিমান্ড ড্রাফট ও যে কোনো নগদ জমা সাধারণ গ্রাহকদের একটিমাত্র কাউন্টারের মাধ্যমেই জমা দিতে হচ্ছে। জমাদানের দীর্ঘ সারি থাকা স্বত্বেও নগদ গ্রহণের গতি ছিল খুবই কম।

টাকা জমা দিতে আসা গ্রাহক জসীম উদ্দিন বলেন, তিনি বেলা ১১টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দুপুর আড়াইটায় টাকা জমা দিতে সক্ষম হন। করোনা সংক্রমণে লকডাউনের কারণে আবার কবে ব্যাংক খোলা হয় তার নিশ্চয়তা নেই। অনিশ্চয়তার শঙ্কা থেকে তিনি মঙ্গলবার তার সঞ্চয় হিসাবে টাকা জমা করতে আসেন।

এসব বিষয়ে সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনা সংক্রমণে ব্যাংক বন্ধ রাখার ঘোষণায় মঙ্গলবার গ্রাহকদের চাপ বেশি ছিল। তাছাড়া তাদের এক কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় নগদ জমাদান কাউন্টার একটি অব্যবহৃত ছিল।

অন্যদিকে, সোমবার দুপুরে হঠাৎ করে জাল টাকা শনাক্তকারী যন্ত্র অচল হয়ে পড়ে বলে জানান তিনি। সোমবার জমাদান কাউন্টারে পাঁচটি এক হাজার টাকার নোট জাল ধরা পড়ে। পরে তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ফলে মঙ্গলবার যন্ত্র ছাড়া টাকা যাচাই বাছাই করে জমা নেওয়ায় নগদ গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা কাঁচামালের আড়তদার আব্দুর রশীদ বলেন, মঙ্গলবারের চেয়ে সোমবার মালামাল সরবরাহের চাপ বেশি ছিল। তবে মঙ্গলবার খুচরা বাজারগুলোতে ক্রেতাদের পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি চাপ ছিল।

যাত্রীবাহী যানবাহনের ওপর চলাচল সীমিত থাকলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাজীপুর মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী ছেড়েছেন অনেকে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক তরিকুল আলম বলেন, 'ঢাকা থেকে গাজীপুরে যাত্রীবাহী যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আবার গাজীপুর থেকেও যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন রাজধানী এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তারপরেও মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি।'

তিনি বলেন, 'দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে অনেক লোক গাজীপুর মহানগরে সীমানায় প্রবেশ করে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে বের হয়েছে। আঞ্চলিক যানবাহনগুলো দিয়ে সাধারণ যাত্রীরা যাতায়াত করেছে। দুপুর ২টার পর থেকে যাত্রীর চাপ কম দেখা গেছে।'

গাজীপুর সদর উপজেলার মণ্ডল গার্মেন্টস লিমিটেডের সুইং শাখার শ্রমিক রনি সরকার জানান, কারখানা বন্ধ না হওয়ায় তারা কেউ এবার গ্রামের বাড়িতে যাননি। মঙ্গলবারও উৎপাদন চলছে এবং যথারীতি তা অব্যাহত থাকবে। কারখানা থেকে তাদের জন্য বিশেষ বাস সোমবার থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser holds high-level meeting to review law and order

The chiefs of three services and several advisers were in attendance, among others

30m ago