জনসমাগম ছাড়া প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে চারুকলায়
প্রত্যেক বছর নানা আয়োজনে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে এ সময় চারুকলায় থাকে উৎসবমুখর পরিবেশ। করোনা পরিস্থিতির জন্য সেই চারুকলার প্রাঙ্গণে এবারও সুনসান নিরবতা, নেই কোনো ব্যস্ততা। তবে, এবার প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। এতে থাকবে না কোনো জনসমাগম।
এবার বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘কাল ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর।’
চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত রনি বলেন, 'প্রত্যেক বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিকৃতি তৈরির দায়িত্ব পান সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এবার আমাদের পাওয়ার কথা ছিল। যদি সব ঠিক থাকতো তাহলে পয়লা বৈশাখের একমাস আগ থেকে আমাদের প্রস্তুতির জন্য ব্যস্ত থাকতে হতো। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সে সুযোগ আর হয়নি।’
চারুকলা অনুষদের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী তাহসিনা ফেরদৌস লিনিয়া বলেন, ‘চারুকলাতে অনেক উৎসবই হয়। কিন্তু পয়লা বৈশাখ আমাদের কাছে একেবারেই আলাদা। এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে মিলন মেলার সুযোগ থাকে। এ সময় ব্যস্ততার মধ্যে কাটানোর কথা ছিল আমাদের। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য সেটি সম্ভব হয়নি। প্রত্যেক বছর এ দিনটির অপেক্ষায় থাকি। গত বছর ঘর থেকেও বের হতে পারিনি। কিন্তু এবার সীমিত পরিসরের আয়োজন থাকলেও সেটি প্রতীকী আয়োজন। শিক্ষা জীবনের হারানো এই সুযোগ আর ফিরে পাবো না। এই মুহূর্তগুলো খুব মিস করব।’
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এজন্য ২০১৬ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর এই স্বীকৃতি হলো রক্ষাকবচ। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা মানবতার জন্য, সভ্যতার জন্য অপরিহার্য জিনিস। তাই এটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সব শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারে। এর মাধ্যমে একটি বার্তা থাকে। সেটি সব সময় মানবতার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। করোনা পরিস্থিতির জন্য গত বছর কোনও ধরনের আয়োজন ছিল না। এ বছরও সীমিত আয়োজন রয়েছে। এ আয়োজনের মধ্যেও করোনা পরিস্থিতির বার্তা রয়েছে।’
অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষক সুমন ওয়াহিদ জানান, বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে খুবই সীমিত পরিসরের আয়োজন করা হচ্ছে এবার।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষকে সামনে রেখে ঐতিহ্যের আলোকে সীমিত পরিসরে উদযাপন করা হবে পয়লা বৈশাখ। এতে কোনও ধরনের জনসমাগম থাকবে না।’
Comments