‘সর্বাত্মক’ লকডাউনে ঢাকার চিত্র
দেশব্যাপী এক সপ্তাহের ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের আজ বুধবার প্রথম দিন। একই সঙ্গে আজ পবিত্র রমজান মাসের ও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সরকারি ছুটি।
আজ সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদকর্মীরা ছিলেন সেখানকার পরিস্থিতি জানাতে।
ফার্মগেট ও মিরপুর রোড পরিদর্শন শেষে ডেইলি স্টারের প্রধান প্রতিবেদক পিনাকী রায় জানিয়েছেন, সেসব এলাকায় লকডাউন কার্যকরভাবেই চলছে। সড়ক ফাঁকা। হাতেগোনা কিছু মানুষকে রাস্তায় দেখা গেছে। এসব এলাকায় কেবল খাবার ও ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে। পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। যারাই যাচ্ছেন, পুলিশ সবার কাছে ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখতে চাচ্ছে।
সরেজমিনে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শুরু করে গাবতলীর আমিন বাজার ব্রিজ পর্যন্ত ও মিরপুর-১ এলাকায় গিয়েছেন ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী এমরান হোসেন।
তিনি জানিয়েছেন, প্রায় পুরো সড়কই ফাঁকা। কিছু যানবাহন বের হয়েছে। প্রত্যেক এলাকার মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। যানবাহনগুলোকে চেক করা হচ্ছে।
‘এর মধ্যে যাদের পাস নেই তাদের জরিমানা করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলকে ছয় শ থেকে এক হাজার দুই শ টাকা, আর গাড়িকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। আর রিকশা কিছু সময়ের জন্যে আটকে রাখা হচ্ছে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, পায়ে হেঁটে খুব কম মানুষকেই দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগই রিকশা বা কোনো না কোনো বাহন নিয়েই যাচ্ছে। তবে, মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট এলাকার কাঁচাবাজারে কিছু লোক দেখা গেছে। সেখানে যানবাহন তুলনামূলক বেশি ছিল।
রাজধানীর শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় ছিলেন ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা জামিল খান। তিনি জানিয়েছেন, শাহবাগ মোড়ে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা রয়েছে। সেখানে মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। যারা আসছেন, রিকশা বা মোটরসাইকেলে করে আসছেন। পুলিশ তাদের প্রত্যেককেই চেক করছে।
তাদের বেশিরভাগের কাছেই ‘মুভমেন্ট পাস’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পায়ে হেঁটে তেমন কাউকে চলাচল করতে দেখা যায়নি।’
রাজধানীর শেওরাপাড়া থেকে কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর, পল্লবী হয়ে ভাসানটেক গিয়েছেন আমাদের সংবাদদাতা শাহীন মোল্লা।
তিনি বলেছেন, ‘চলার পথে দেখেছি— মহল্লার ভেতরে ওষুধের দোকান, মুদির দোকান, তরকারির দোকান, এমনকি, খাবারের দোকানও খোলা আছে। কোনো কোনো রড-সিমেন্টের দোকানকে শার্টার নামিয়ে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।’
‘তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, পুলিশের গাড়ি এক দেড় ঘণ্টা পর পর গলির ভেতরে আসে। তখন তারা শার্টার বন্ধ করে দেন,’ যোগ করেন তিনি।
‘পল্লবীতে গলির ভেতরে কয়েকটি দোকান খোলা দেখা গেছে। সেগুলোর মধ্যে চশমার দোকান, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, মেকানিকের দোকান, এমনকি, বিউটি পার্লার পর্যন্ত খোলা দেখেছি।’
তিনি ভাসানটেক বাজারে অনেক মানুষের ভিড়ের কথাও জানিয়ে বলেছেন, ‘বাজারের ভেতরে লোকজনের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। মাস্ক নেই এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, গলিতে মাস্ক পরি না। মেইন রাস্তায় গেলে মাস্ক পরি।’
ভাসানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে আট-দশজন পুলিশ সদস্যের একটি দলকে দেখা যায় বস্তির কাছে। তারা মাইক হাতে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেখলে তা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
ওসি শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাজারের ভেতরে অনেক ভিড় আমরা দেখেছি। এটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তারপরও দোকানদারদের বলেছি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে।’
আরও পড়ুন:
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত, লকডাউনে ব্যাংক খোলা ১০টা থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত
লকডাউনে কাঁটাবন মার্কেটের পোষা প্রাণীদের কী হবে?
লকডাউনে কাউকে রাস্তাঘাটে দেখতে চাই না: আইজিপি
১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত
১৪-২১ এপ্রিল: নতুন বিধি-নিষেধে যেভাবে চলার নির্দেশনা
১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের চিন্তা: সেতুমন্ত্রী
Comments