শ্যামনগরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ, আহত ১৩

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ১৩ জন আহত হয়েছেন।
Shymnagar.jpg
মোটর সাইকেল ও পিকআপযোগে আসা একদল সন্ত্রাসী হিন্দুদের বসত ঘরসহ মন্দিরের একটি প্রতিমা ভাঙচুর করে বলে জানা যায়। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ১৩ জন আহত হয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় মোটর সাইকেল ও পিকআপযোগে আসা একদল সন্ত্রাসী হিন্দুদের বসত ঘরসহ মন্দিরের একটি প্রতিমা ভাঙচুর করে বলে জানা যায়।

সন্ত্রাসীদের হামলায় যতীন বাউলিয়া (৩৭), সুভাষ বাউলিয়া (৬৫), গোবিন্দ বাউলিয়া (৪০), মিলন বাউলিয়া (১৮), নিন্দানন্দ বাউলিয়া (৩৬), তপন বাউলিয়া (৩৫) মহানন্দ বাউলিয় (৩০) পূর্ণিমা বাউলিয়া (৩৫) নগেন্দ্র বাউলিয়া (২৭) ও তপন বাউলিয়া (৩০), পিন্টু বাউলিয়াসহ (৪০) মোট ১৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নয় জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলায় অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীরা এসময় কয়েকটি বাড়িতে লুটপাটও চালায়। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

স্থানীয়দের দাবি, শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের পল্লব মণ্ডল ও ইউপি সদস্য আকবর হোসেনের নেতৃত্বে বংশীপুর থেকে আসা ৬০-৭০ জন সন্ত্রাসী এ হামলায় অংশ নেন। পল্লব মণ্ডল শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন শাখার সম্পাদকীয় পদে আছেন। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর হোসেনের বাড়ি থেকে হামলায় ব্যবহৃত ইট-পাটকেল সরবরাহ করা হয়।

হামলার শিকার পরিবারের সদস্য সংবাদকর্মী পিন্টু বাউলিয়া জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা তাদের গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। এসময় তারা তার আত্মীয় নগেন বাউলিয়া ও সুভাষ বাউলিয়াসহ তিন জনের বসত ঘরসহ পাশের রাশ মন্দিরের একটি প্রতিমা ভাঙচুর করে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবেশী আকবর হোসেন মেম্বারের বাড়ি থেকে ইট-পাটকেলসহ হামলার রশদ সরবরাহ করা হয়।

হামলার শিকার গোবিন্দ বাউলিয়া জানান, হামলাকারীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে বাড়িতে ঢুকে তার ভাইয়ের মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে তার ভাইসহ পরিবারের ১৩ জন সদস্য আহত হন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উত্তর কদমতলা গ্রামের পল্লব মণ্ডল সুন্দরবন বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী যতীন বাউলিয়ার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল। সোমবার উত্তর কদমতলা গ্রামের কয়েকজন পল্লবকে সর্তক করেন। এসময় তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ১৫-২০টি মোটর সাইকেল ও দুটি পিকআপযোগে বংশীপুর এলাকা থেকে ৬০-৭০ তরুণ কদমতলা গ্রামে হামলা করে।

আকবর ও পল্লব ছাড়াও আলিম, রবিউল, আইনুল, খোকন, মিলন, ইয়াকুব, সুজন, সাইদুলসহ অন্তত ৭০ জন হামলায় অংশ নেন বলে জানান স্থানীয়রা।

ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মৃণাল মণ্ডল জানান, সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পল্লব মণ্ডল ও আকবর হোসেনের ফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

ওসি নাজমুল হুদা জানান, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ঘটনার সৃষ্টি। সন্ত্রাসীরা দুটি বসত বাড়ি ও একটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। কয়েকজনকে পিটিয়ে তারা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।

এ ঘটনায় আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গোবিন্দ বাউলিয়া ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৬০-৭০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে বলেও জানান ওসি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago