রাঙ্গাবলীতে খাল সেচে প্রভাবশালীদের মাছ শিকার, কৃষিজমি পানিশূন্য

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় চর লাতা গ্রামের একটি সরকারি খালের স্বাদু পানি সেচে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। এতে বোরো ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পানি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ছেন খালের দুই পাড়ের কৃষকরা।
মাছ ধরতে শ্যালো টিউবয়েলের ইঞ্জিন দিয়ে সেচে ফেলা হচ্ছে রাঙ্গাবলীর গাজীর খাল। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় চর লাতা গ্রামের একটি সরকারি খালের স্বাদু পানি সেচে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। এতে বোরো ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পানি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ছেন খালের দুই পাড়ের কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সেচ দিয়ে সরকারি ‘গাজীর খাল’ পানিশূন্য করে মাছ শিকার করছে। চলতি মৌসুমে তরমুজ উঠে গেলেও, এখন খালের দুই পাড়ে চলছে বোরো আবাদ। এর জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর পানি। কিন্তু খালে সেচ দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ শিকার করায় বোরো আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সংকট তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রাঙ্গাবালীর উপকূলীয় চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চারিদিকে লোনা পানি। প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা এই খালটির পূর্ব ও পশ্চিম দুই মুখেই রাবনাবাদ নদী। প্রায় ১০ বছর আগে খালটির ওই দুই প্রান্তে বাঁধ দিয়ে নদী থেকে লোনা পানি আসা বন্ধ করা হয়। এরপর থেকেই খালটির দুই পাড়ের সহস্রাধিক কৃষক রবি ফসলের জন্য খালে সংরক্ষিত স্বাদু পানি ব্যবহার করছিলেন।

ছবি: স্টার

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালটির দুই পাড়ে বিভিন্ন জায়গায় সেচযন্ত্র বসিয়ে এক সপ্তাহ ধরে পানি অপসারণ চলছে। খালের কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ করছেন ১০-১২ জন। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছ ধরা হচ্ছে।

খালে যারা মাছ ধরছিলেন তাদের একজন নান্নু হাওলাদার। তিনি জানান, ৩৩ জন মিলে পানি অপসারণ করে মাছ ধরছেন। গলাচিপা থেকে সেচযন্ত্র ভাড়া করে আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এতে করে খালটি পরিষ্কার হবে আর মাছ ধরে তারাও লাভবান হবেন।

পানি এভাবে অপসারণ করায় কৃষকরা স্বাদু পানি সংকটে পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তরমুজ উঠে গেছে। ধান আবাদ কম, কাজেই তেমন ক্ষতি হবে না। খালের পাড়ের অনেক কৃষককে এ কাজে যুক্ত করা হয়েছে।’

অনুমতি ছাড়া সরকারি খাল সেচে শুকিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।’

খাল থেকে স্বাদু পানি অপসারণ করা হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় কৃষকরা প্রতিবাদ করতে পারছে না। ফোনে যোগাযোগ করা হলে কয়েকজন কৃষক জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এখানে খুবই কম আসা যাওয়া করছে। এই সুযোগে প্রভাবশালীরা পানি অপসারণ করে মাছ শিকার করছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বোরো খেতে সেচের পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

এক কৃষক জানান, তিনি সাড়ে তিন একর জমিতে ব্রি-২৮ ও হীরা-১ জাতের বোরো ধান আবাদ করেছেন। চৈত্র-বৈশাখের শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর পানির প্রয়োজন। কিন্তু, খেতে প্রয়োজনীয় পানি দিতে পারছেন না তিনি। এতে তিনি ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

যোগাযোগ করা হলে ওই ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা অলক কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গাজীর খালের দুই পাড়ে অন্তত ২৫ হেক্টর জমিতে বোরোসহ রবি ফসলের আবাদ হয়েছে। মাছ শিকারের ফলে সেখানে সেচের পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাবুব হাওলাদার বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমানও একই কথা বলেন।

ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমি ওই এলাকার লোকজনকে খাল সেচে মাছ ধরতে নিষেধ করেছিলাম। তবে সেখানকার লোকজন কথা শুনছেন না।

তিনি বলেন, ‘এভাবে খাল সেচে কেউ মাছ ধরতে পারবে না। কৃষক যেন প্রয়োজনীয় সেচের পানি পেতে পারে এ ব্যাপারে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago