‘এই যুদ্ধে আমেরিকা হেরেছে’ দাবি তালেবানদের
‘আমেরিকার দীর্ঘতম লড়াই’ শেষ করতে আগামী ১ মে থেকে আফগানিস্তানে অবস্থানকারী মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অন্যদিকে, যুদ্ধে তালেবানরা জয়ী হয়েছে—বলে ঘোষণা দিয়েছেন তালেবান নেতা হাজী হেকমত।
বুধবার সেনা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকার দীর্ঘতম লড়াই শেষ করার এটিই সময়।’
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সব সৈন্য প্রত্যাহারের পরও যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে কিন্তু সেটা ‘সামরিকভাবে’ নয় বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
আফগানিস্তানে থাকা আড়াই হাজার মার্কিন সেনাকে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। ২০ বছর আগে এই দিনেই যুক্তরাষ্ট্রে আল কায়েদার হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
বাইডেন বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিলাম। আমরা এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করেছি।’
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে আফগানিস্তান।
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি বলেন, ‘আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এ ছাড়া, কাবুল চলমান শান্তি উদ্যোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সহজ করতেও আফগান সরকার তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের গৌরবোজ্জ্বল নিরাপত্তা বাহিনী জনগণ ও দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম, যা তারা সর্বাত্মকভাবে করে আসছে এবং এর জন্য আফগান জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে।’
অন্যদিকে, যুদ্ধে তালেবানরা জয়ী হয়েছে—বলে ঘোষণা দিয়েছেন তালেবান নেতা হাজী হেকমত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের অনেক অংশে আফগান সরকার বড় শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করলেও গ্রামাঞ্চলের বড় অংশে এখনও তালেবানদের উপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণ আছে।
এক ঘোষণায় হাজী হেকমত বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে জিতেছি এবং আমেরিকা হেরেছে। আমরা যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত। আমরা শান্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এবং আমরা জিহাদের জন্যও পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত।’
আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর তালেবানরা বিদেশি বাহিনীর উপর আক্রমণ বন্ধ করে দেয়। তবে তারা আফগান সরকারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে।
হাজী হেকমত জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা শরিয়া শাসিত একটি ইসলামী সরকার চাই। তারা আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা “জিহাদ” চালিয়ে যাব।’
বিবিসি জানিয়েছে, তালেবানরা নিজেদের শুধু একটা বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে মনে করে না, বরং তারা সরকার গঠনের প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা নিজেদের দলকে ‘ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান’ দোহা চুক্তিতে উল্লিখিত তারিখের মধ্যে নিজ ভূমি থেকে সমস্ত বিদেশি সেনা প্রত্যাহার চায়। যদি চুক্তি মেনে চলা হয়, তবে বাকি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যও একটি পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু, যদি চুক্তি লঙ্ঘন হয় এবং নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বিদেশি বাহিনীগুলো আমাদের দেশ থেকে চলে যেতে ব্যর্থ হয়, তবে অবশ্যই সমস্যাগুলো আরও জটিল হবে এবং এর জন্য যারা চুক্তি মানতে ব্যর্থ হয়েছে তারাই দায়ী থাকবেন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে কাবুলের দুই জন বাসিন্দার মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। কাবুলের বাসিন্দা মেহেরউদ্দিন ওয়াসিক বলেন, ‘আমেরিকানরা আফগানিস্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব শেষ করেনি। তাদের দায়িত্ব ছিল আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী সরকার, আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাসবাদ, মাদক, অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপ নিয়ে জনগণের যে উদ্বেগ তা নিরসন নিশ্চিত করা। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্ব শেষ না করা পর্যন্ত আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত নয়।’
আরেক বাসিন্দা সাইয়েদ আহাদ আজিজী বলেন, ‘সব মানুষই শান্তি চায়। তবে বিদেশি সেনারা যদি এখানে থেকে যায় তবে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হবে। তাদের উপস্থিতি সমস্যার সৃষ্টি করতেই থাকবে।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আফগানিস্তানে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ, আরও কঠিন সমস্যা আসবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আফগান জনগণ, বিশেষত যারা মানবাধিকারের পক্ষে অসাধারণ ঝুঁকি নিয়েছেন তাদের সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে অনড় থাকতে হবে। তবে প্রায় দুই দশক পরে আমাদের সেনাবাহিনীকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়ার পরে এখন স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে যে সামরিকভাবে আমরা যা কিছু সম্ভব তা সবই অর্জন করেছি। অবশিষ্ট সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমদের জাতি গঠন ও বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনরুদ্ধারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমি তাতে সমর্থন জানাই।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ‘আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের’ সমাপ্তির পরিকল্পনার কথা দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন বাইডেনের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে পরাজয়ের আগে গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন তালেবানদের সঙ্গে একমত হয়েছিল যে, ২০২১ সালের ১ মে’র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
আরও পড়ুন:
Comments