গাজীপুরের নদীতে ময়মনসিংহের বর্জ্যের বিষাক্ত পানি

শ্রীপুরের নান্দিয়াসাঙ্গুণে বানার নদীর বিষাক্ত পানিতে মাছ ধরছেন স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কাপাসিয়া, শ্রীপুর ও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলাকে বিভক্ত করেছে বানার ও শীতলক্ষ্যা নদী। তিন উপজেলার সংযোগস্থল ত্রিমোহনী ও আশপাশের এলাকায় গত চার দিন আগে এই নদী দুটির পানির রং হঠাৎ পরিবর্তন হয় এবং তাতে তীব্র দুর্গন্ধ দেখা দেয়।

গত রোববার রাত থেকে মাছসহ জলজ প্রাণী নদীর পাড়ে আধমরা হয়ে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠা মাছ ও নদীর পানি খেয়ে অন্তত ৩০টি হাঁস মারা গেছে। চর্মরোগ দেখা দিয়েছে অনেকের।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ভালুকা থেকে নদী-নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিষাক্ত বর্জ্য গাজীপুরের নদীর পানি দূষণ করছে। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, বিগত দিনে এই নদী থেকে খুব বেশি মাছ ধরা পড়েনি। অথচ, গত রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত একদিনেই একেকজন অন্তত ১০ কেজি করে মাছ ধরেছেন বলে দাবি করেন।

শ্রীপুরের নান্দিয়াসাঙ্গুণ দক্ষিণপাড়া গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী মারুফ, অমি ও দুর্জয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রোববার হঠাৎ করেই বানার ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানির রং কালচে হয়ে ওঠে। মাছসহ জলজ প্রাণী নদীর পাড়ে আধমরা হয়ে ভেসে ওঠে। শত শত মানুষ ওই রাতেই মাছ ধরতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

স্থানীয় অধিবাসী আবুল কাশেম তার বাম পায়ে লাল ক্ষত দেখিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ করে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ওই পানিতে সোমবার মাছ ধরতে গিয়ে এই ক্ষত হয়েছে।’

গৃহিণী ফাতেমা খাতুন ও নুরুন্নাহার জানান, নদীতে গিয়ে মাছ ও পানি খেয়ে তাদের ১৪টি হাঁস মারা গেছে।

বানার নদীতে ডিঙি নৌকা দিয়ে মাছ ধরেন মো. ফারুক হোসেন। তার অভিযোগ, ‘ভালুকার বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি ক্ষীরু, সুতিয়া ও ধাত্রী নদী দিয়ে গাজীপুরের বানার ও শীতলক্ষ্যায় এসে পড়েছে।’

‘বুধবার নদীতে কোনো মাছ পাওয়া যায়নি। এই নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। এখন কী করব?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

স্থানীয় কৃষক হাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার থেকে নদীর পাড়ে বসে থাকাই কষ্টকর। মাঝে মধ্যে ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘পরিশোধিত পানি ছাড়া কল-কারখানার নিষ্কাশিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি বেশি পরিমাণে টক্সিক। এসব পানি নদী, নালা, খাল, বিলে গিয়ে পড়লে মাছসহ জলজ প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। ফলে সেগুলো আধামরা হতে পারে বা মারা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব মাছ খাওয়া মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। এতে কিডনি, লিভারসহ মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট হয়ে থাকে।’

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস ছালাম জানান, শীতলক্ষ্যা ও বানার নদীর পরিবেশ দূষণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। নদী দুটির কাছাকাছি গাজীপুর জেলার অভ্যন্তরে বর্জ্য নিষ্কাশনের মতো কোনো কলকারখানা নেই। ভালুকা থেকে নদী নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিষাক্ত বর্জ্য গাজীপুরের ওই দুটি নদীর পানি দূষণ করছে। আমরা ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তারা বলেছেন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। ভালুকা উপজেলার কারখানাগুলোর নিষ্কাশন করা পানি বছরে তিন বার ল্যাব টেস্ট করে অধিদপ্তরে জমা দেয়। ইতিবাচক প্রতিবেদনের পরই কেবল কারখানাগুলোর পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার বেশিরভাগ কারখানার ইটিপি ভালো। আমাদের অগোচরে কোনো কারখানা ইটিপি ব্যবহার না করে থাকলে সমস্যা হতে পারে। করোনা লকডাউনের মধ্যেও আমরা খোঁজখবর রাখছি। কারখানাগুলোর প্রতি নতুন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন নিজেদের পানি নিষ্কাশন না করে নিজেরাই ব্যবহার করে।’

তবে সেখানে মোট কতগুলো কারখানা আছে তিনি তা জানাতে পারেননি। ফরিদ আহমদ জানান, সব পর্যায়ের কারখানার ইটিপি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ভালুকা উপজেলায় ইটিপি ব্যবহার করে এমন কারখানার সংখ্যা আনুমানিক ৫৫টির মতো।

Comments

The Daily Star  | English

Israel welcomes 'all help' in striking Iran

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago