আড়াই হাজার টাকা করে পাবে ৩৫ লাখ পরিবার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সরকার ঘোষিত ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনে উপার্জন হারানো প্রায় ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আবারও নগদ অর্থ সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার।
গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন সফিয়া খাতুন (৪৫)। গত বছর করোনায় কাজ হারিয়ে এখন উপার্জন করছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে। ছবিটি গতকাল রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকা থেকে তুলেছেন আমরান হোসেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সরকার ঘোষিত ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনে উপার্জন হারানো প্রায় ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আবারও নগদ অর্থ সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই সহায়তার আওতায় ঈদুল ফিতরের আগেই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে প্রত্যেক পরিবারকে এককালীন নগদ দুই হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্যে গত ৮ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পাঠায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রস্তাবনাটির অনুমোদন পেলেই আমরা টাকা বিতরণের কাচ শুরু করব।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত বছর করোনাভাইরাসের শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন পৌনে ৯০০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছিল। পরে তালিকায় অনিয়ম থাকায় কর্মসূচিটি সাময়িক স্থগিত হয়। এবার ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্যে ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

সে সময় নগদ অর্থ সহায়তার প্রয়োজন আছে এমন ৫০ লাখ পরিবারের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সরকারের মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই তালিকা তৈরি করেন। তালিকায় ছিলেন— রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষক, দোকান কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিক।

গত বছরের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী এই অর্থ বিতরণ কাজের উদ্বোধন করেন। তবে, টাকা বিতরণে অনিয়ম ও তালিকায় অনেক সচ্ছল ব্যক্তির নাম থাকায় মাঝপথে এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে, অর্থ বিভাগ সেই তালিকা কয়েক পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে ১৪ লাখ ৩২ হাজার নাম বাদ দেয়। এরপর ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৩ জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহামারি মোকাবিলায় সরকারের জরুরি সহায়তা তহবিলের ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে এই ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ ও মৃত্যুহার কমাতে গত বুধবার সকাল থেকে ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর ফলে ঘরে বসে থেকে কঠিন সময় পার করছেন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

দিনকে দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারে পৌঁছেছে। এ ছাড়া, একদিনে ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে সরকার বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়াতে পারে। এর ফলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

গত ১১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে এক বাজেট-পূর্ববর্তী বৈঠকে অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল— অতিদরিদ্র; যারা লকডাউনে কঠিন সময় পার করছেন, তাদের ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতিতে অর্থ সহায়তার কথাও।

পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার সব সময় গরিব মানুষের পাশে আছে। তিনি আরও জানান, লকডাউনে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রয়োজনীয় সহায়তায় সব ধরনের উদ্যোগ নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলে রেখেছেন।

অন্যান্য সহায়তা

নিম্ন আয়ের মানুষদের নগদ অর্থ সহায়তা ছাড়াও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্ত বোরা চাষিদের অর্থ সহায়তা দেবে সরকার। গত সপ্তাহের ঝড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওর ও সমতলভূমির প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ফসল নষ্টের ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে এক লাখ কৃষককে এককালীন নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে সহায়তা দেবে সরকার। এ জন্য গত সপ্তাহে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে কৃষকদের ফোন নম্বরসহ একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালিকা তৈরি হয়ে গেলে অর্থ বিভাগ তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়াও, টেস্ট রিলিফ (টিআর), জেনারেল রিলিফ (জিআর), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) ও ভালনারেবল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচির জন্যে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

লকডাউনে গ্রামীণ জনগণের সাময়িক অর্থ সহায়তার উদ্দেশ্যে এসব অতিরিক্ত ফান্ড চালু করা হয়। এসব প্রকল্পের জন্য মূল বরাদ্দ ছিল এক হাজার ২১৬ কোটি টাকা।

টিআর কর্মসূচির আওতায় গ্রামাঞ্চলে কর্মহীন মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ক্ষুদ্র পুনর্বাসন প্রকল্পগুলো। এ ছাড়া, ভিজিএফের আওতায় অতিদরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে লকডাউনের সময় দরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই টাকা জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে বিতরণ করবে। ত্রাণ হিসেবে চাল, মসুর ডাল ও তেল বিতরণ করা হবে।

যদি চলমান ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়, তাহলে দেশের ১১ সিটিতে ভর্তুকি দিয়ে ৭৫ হাজার টন চাল খোলা বাজারে বিক্রি করা হবে। ১০ টাকা কেজি দরে এই চাল বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে পরিস্থিতির কিছুটা উপশম করা যাবে।

পাশাপাশি সরকার পরিচালিত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভর্তুকিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago