‘সুভাষ দা’র কারণে আজকের কবরী আমি’
বরেণ্য অভিনেত্রী সারাহ কবরীর সিনেমায় অভিষেক হয় ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ দিয়ে। খ্যাতিমান নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোচিত হয়ে উঠেন কবরী। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে তার পরিচয়, কাজের অভিজ্ঞতাসহ সুভাষ দত্তের চলচ্চিত্রে প্রথম সুযোগ পাওয়া নিয়ে কবরী ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর তার নিজ বাড়িতে কথা বলেছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: বরেণ্য পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় ‘তিতাস একটি নদীর’ নাম ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই।
সারাহ কবরী: ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। তার ছবিতে কাজ করার আগে আমাকে চরিত্রের জন্য স্ক্রিন টেস্ট দিতে হয়েছে। আমাদের যে নির্মাতারা আছেন তার থেকে ওনার কাজের ধরন একটু আলাদা। আর এক ছবির মাধ্যমে এতো কিছু জানা যায় না।
একজন নির্মাতার যেসব চিন্তা-ভাবনা থাকে তার প্রতিটি জিনিসই ছিল তার হাতের মুঠোয়। প্রত্যেক শিল্পীর চরিত্র, মেকআপ, গেটআপ- সবকিছু তার মাথার মধ্যে থাকতো। তার সেটে নায়ক-নায়িকা কারা তা বোঝার উপায় ছিল না। সবাইকে সমান মূল্যায়ন করতেন। কে, কখন, কী কস্টিউম পরবো- এর সব পরিচালকের মাথায় থাকতো। শট শুরু হওয়ার আগে দাদা বলতেন- ‘তোর দৃশ্যটা এমন হবে।’
ঋত্বিক দা’র প্রতিটি ফ্রেম এক একটি শিল্পকর্ম। অনেক কিছু শিখেছি এবং আত্মবিশ্বাসও জন্মেছে। কাজ করার সময় বুঝতে পারিনি। যখন সিনেমা হলে ছবিটা দেখেছি, তখন দেখলাম একটি মালো জাতির সুখ-দুঃখের যে মানবিক দলিল চিত্রায়ন হতে পারে সিনেমায় তিনি তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এক বিশাল ক্যানভাসকে তিনি আড়াই ঘণ্টার ছবির মধ্যে নিয়ে এসেছেন।
ডেইলি স্টার: ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবির আগেই কি ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে আপনার পরিচয় ছিল?
সারাহ কবরী: দাদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন আমি কলকাতায় ছিলাম। ল্যান্ড ফোনে একটি ফোন আসে। ফোন রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শব্দ আসে, ‘তুই কি কবরী?’ তারপর দাদা বললেন, ‘তোর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ এরপর তার বাসার ঠিকানা দিয়ে বললেন, যেকোনো ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বললেই তোকে নিয়ে আসবে। বললাম, ‘আমি আপনাকে চিনবো কী করে?’ বললেন, ‘আমি তোকে রিসিভ করবো।’
যেভাবে তিনি বর্ণনা দিয়েছিলেন আমি সেভাবেই গিয়েছিলাম। ওনার সঙ্গে দেখা করি। দাদা খুবই আন্তরিক ও ভালো মানুষ। দাদার ছবিতে অভিনয় করার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি তখন।
সারাহ কবরী: আপনাকে সিনেমায় প্রথম আবিষ্কার করেন সুভাষ দত্ত। ঋত্বিক ঘটক আপনাকে কীভাবে খুঁজে পেলেন?
সুভাষ দা তার ছবির জন্য নতুন একজন নায়িকা খুঁজছিলেন। আমার পরিবার ছিল সাংস্কৃতিক পরিবার। চট্টগ্রামের সবাই আমাদের জানতেন। বাবাকে সবাই চিনতেন। কামাল নামে বাবার একজন বন্ধু ছিলেন। খুবই সংস্কৃত অনুরাগী মানুষ ছিলেন তিনি। তাকে সত্য দা চিনতেন। সত্য দা’র সঙ্গে আবার সুভাষ দা’র পরিচয় ছিল। তাকে আমার ছবি দেখালেন, পরে আমাকে ডাকলেন। আমার সঙ্গে কথা বললেন। তখন আমার একটি মাত্র সমস্যা ধরা পড়লো। আমার কথায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিকতা। পরে অনেক মহড়া করে নাচ, গান, অভিনয়, ভাষা ঠিক করতে হয়েছে। দাদাই আমাকে প্রথম সুযোগ দিয়েছেন। ‘সুতরাং’ ছাড়াও ‘আবির্ভাব’ নামে দাদার আরেকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। সুভাষ দা’র কারণে আজকের কবরী আমি।
আরও পড়ুন:
Comments