৯ বছর পর মির্জা আব্বাস দিলেন ইলিয়াস আলীর ‘গুম তথ্য’

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
এম ইলিয়াস আলী ও মির্জা আব্বাস: ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে আজ শনিবার ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন।

সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনী-ঢাকার উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

আব্বাস বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক সাহসী নেতা। এখানে আমাদের দলের মহাসচিব আছেন, তাকে বলতে চাই, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমাদের দলের যে বদমাইশগুলো রয়েছে, তাদেরকেও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়, ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিল তাকে। সেই বিষধর সাপগুলো এখনো আমাদের দলে রয়ে গেছে। যদি এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে না পারি, সামনে এগুতে পারবেন না কোনো অবস্থাতেই।’   

তিনি আরও বলেন, ‘ইলিয়াস যে রাতে গুম হন, ওই রাত দেড়টা-পৌনে ২টার দিকে খবর পাই। তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে জানায়, তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, যে পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে থেকে নেওয়া হলো, সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই খবরটা আপনারা (উপস্থিত নেতৃবৃন্দ) জানেন না। সেই গাড়িতে যে কয়জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিল, তাদের আজও পাওয়া যায়নি। যেহেতু ইলিয়াস আলীর গাড়িচালককেও পাওয়া যায়নি। তাহলে এই কাজটি করল কে?’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘...আমি ধরে নিলাম আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি, তাহলে গুম করল কে? আমাদের একজন নেতা সালাউদ্দিনকে পাচার করে নিয়ে গেল, চৌধুরী আলমকে গুম করা হল, আমাদের দলের বহু নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। এটা কিন্তু বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পূর্ব আলামত।’

বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও তার গাড়িচালক ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে বেআইনিভাবে আটক করে রেখেছে। এ ছাড়া, ইলিয়াস আলীর মুক্তির জন্য তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।

ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে- স্ত্রীর এই অভিযোগের পর, ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, সরকারকে তা জানাতে বলেন আদালত। স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে থানার ওসি পর্যন্ত ১০ জনকে ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাবও দিতে বলা হয়।

এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং হাইকোর্টও এ বিষয়ে কোনো পক্ষের শুনানি গ্রহণ করেননি। ফলে বিষয়টি এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনার রুশদির লুনার আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো দাবি করেছে, তারা ইলিয়াস আলীকে আটক করেনি। তাই হাইকোর্টে ইলিয়াস আলীর শুনানির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এ কারণেই এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাননি তার স্ত্রী।’

যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন ও জহিরউদ্দিন স্বপন প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago