‘এলোপাতাড়ি গুলি’র অভিযোগ শ্রমিকদের, ‘শ্রমিকরা আক্রমণ করেছিল’ দাবি পুলিশের

বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শ্রমিককে চিকিৎসার জন্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকরা বেতন, বোনাসসহ আরও কিছু দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছিলেন। সকাল ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও গুলিতে পাঁচ জন শ্রমিক নিহত ও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।

বিকেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত দুই শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। এসময় তারা আজ সকালে সেখানে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন।

নারায়ণগঞ্জের শাহেদুল করিম রাজু (৪০) গত সাত মাস ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকের কাজ করছেন। সকালে কী হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ সেহরি খাওয়ার পর কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম। সকালে চীনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। পুলিশও এখানে আসে। পুলিশ আসার পর বলেছে- সেখানে যাওয়ার জন্য। আমরা বললাম, চার-পাঁচজন না গিয়ে আমরা সবাই একত্রে যাই। চার-পাঁচ জন কথা বলবে, আমরা সবাই তাদের কথা শুনব। এমন সময় পুলিশ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন এখানে চিল্লাচিল্লি শুরু হয় আর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়।’

আপনাদের কী কী দাবি ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল ১০টা। এর মধ্যে- বাথরুম ঠিক নাই, পানির সমস্যা, রোজার মাসে ডিউটির সময় কমিয়ে দেওয়া, ইফতারি ও নামাজের জন্য সময় দেওয়া। অনেক কোম্পানিতে ১০ ঘণ্টা ডিউটি, অনেক কোম্পানিতে ১২ ঘণ্টা ডিউটি। আরেকটা দাবি ছিল- দুই ঈদে বোনাস দেওয়া।’

সকালে পুলিশের বর্ষণ করা একটি গুলির খোসা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যে গুলির খোসা। স্থানীয়রা সংগ্রহ করেছে। প্রায় একশ থেকে দেড়শ লোক আহত হয়েছে। মারা গেছে প্রায় আট থেকে দশ জন।’

চাঁদপুর থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিক রুবেল (৩৫) বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল, আমরা এক ঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম। আমাদের ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আমাদের ঘণ্টা হিসেবে টাকা। কারও ১০০ টাকা, কারও ৭০ টাকা, কারও ৫০ টাকা, কারও ১২০ টাকা ঘণ্টা। যত ঘণ্টা কাজ, তত টাকা। আমরা চেয়েছিলাম রমজানের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি। এই দাবি নিয়ে গেলে আজ সকালে পুলিশ আমাদের লোকজনের ওপর গুলি শুরু করে। মানুষ আহত-নিহত হয়।’

‘আমাদের এখানে ১০ হাজার শ্রমিক আছে। এখানে বাথরুমের সমস্যা, খাওয়া-দাওয়ার অনেক কষ্ট, থাকার অনেক কষ্ট। আমাদের ফ্যামিলির যেন কষ্ট না হয়, এই ভেবে আমরা আছি। এখানকার চাল-ভাত খাওয়ার কোনো পরিস্থিতি নাই। আমরা বাইরে যেতে পারি না। আমরা বন্দী অবস্থায় থাকি। আমাদের টয়লেট প্রবলেম, পানির প্রবলেম। ডিউটি করে আসার পর পানি পাই না। কারও কাছে যে এসব বলব, এখানে এমন কোনো লোক নাই। আমরা চাচ্ছিলাম- এক ঘণ্টা সময়, যেন ইফতারি বাসায় করতে পারি। পুলিশ আমাদের রক্ত ঝরাইছে...’, এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্রমিকদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে গতকালই তাদের অধিকাংশ দাবি-দাওয়া নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কয়েকটি অনিষ্পন্ন বিষয় ছিল, যেগুলো নিয়ে আজ আলোচনার কথা ছিল।’

‘সকাল ৯টার দিকে স্থানীয়দের ইন্ধনে পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য আশপাশের এলাকার লোক ও স্থানীয় শ্রমিকরা একযোগে চীনা নাগরিক ও পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এসময় তারা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়’, বলেন তিনি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘চীনা নাগরিকদের জীবন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্পদ রক্ষায় পুলিশের যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা তারা নিয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:

বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনার নিন্দা, ৬৮ নাগরিকের বিবৃতি

বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, নিহত ৫

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago