পটুয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩১৩ জন

২ দিনে ৪ জনের মৃত্যু
ছবি: সোহরাব হোসেন

পটুয়াখালীতে আশঙ্কাজনকভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত দুই দিনে অন্তত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩১৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।

জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ইউনিয়নের সমাদ্দারকাঠি গ্রামের রাকিব খন্দকারের কন্যা শাহারা সানফুল (১৫) রবিবার সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়, দুপুর দুইটার দিকে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। এর আগে শনিবার সকালে মাধবখালীতে তৈয়ব আলী শিকদার (৭৫) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি আরও জানান, তার এলাকায় দুই শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। বর্তমানে করোনার চেয়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দুমকী উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর শাহিদুল হাসান জানান, জলিশা গ্রামের আ. হক মুনশী (৮২) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে রবিবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও তার শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের উপসর্গও ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মির্জাগঞ্জ উপজেলায়।

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিলরুবা  ইয়াসমিন লিজা বলেন, ‘মির্জাগঞ্জে ডায়রিয়া ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া, গত ৭ দিনে ৩৪৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হন।’

এদিকে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা ও ওষুধের সংকটে পড়েছেন রোগীরা। অনেকের অভিযোগ ৯২ টাকার স্যালাইন কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখানে ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ১৫৭ জন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত ৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন রোগী। হাসপাতালের করিডোরেও ছিল প্রচণ্ড ভিড়। শয্যা সংকটের পাশাপাশি এখানে মারাত্মক স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা শহরের শিমুলবাগ এলাকার আল আমিন (৪৫) জানান, তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার ভর্তি হন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১১টি স্যালাইন নিয়েছেন। কিন্তু, সবগুলোই কিনতে হয়েছে বাইরের দোকান থেকে।

সদর উপজেলার নন্দিপাড়া গ্রামের জব্বার খলিফা জানান, আজ সকালে তার দুই বছর বয়সের নাতী জুনায়েদ ও আট বছরের মেয়ে আফরোজাকে এখানে ভর্তি করেন। হাসপাতাল থেকে কোনো স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না। তাদের জন্য বাইরের দোকান থেকে অতিরিক্ত দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিটি স্যালাইনের স্বাভাবিক দাম ৯২ টাকা হলেও ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

স্যালাইন সংকটের বিষয়ে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. লোকমান হাকিম জানান, কয়েকদিন ধরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। তবে, ঢাকার কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার থেকে স্যালাইন আনতে রবিবার একটি ট্রাক পাঠানো হয়েছে। শিগগির সংকট কেটে যাবে।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৩ জন ডায়রিয়া রোগী পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালসহ ৮টি উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ৭৬ জন, মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ৯৩  জন, গলাচিপা ও বাউফলে ৪০ জন করে, দশমিনায় ২৫ জন, দুমকীতে ১৭ জন কলাপাড়ায়  ১২ জন, পটুয়াখালী সদর উপজেলা হাসপাতালে ১০ জন। গত এক সপ্তাহে জেলায় মোট ১৭৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলা ওষুধ প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

6h ago