বিবাদমান দুই পক্ষকে পেশাদার ফুটবলারদের সংগঠনের হুঁশিয়ারি
ইউরোপিয়ান সুপার লিগ চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। ইতোমধ্যে মহাদেশটির ১২টি শীর্ষস্থানীয় ক্লাব সেখানে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে এমন প্রতিযোগিতা আয়োজনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ফিফা ও উয়েফা। তারা বলেছে, এই লিগে অংশ নেওয়া কোনো ফুটবলার খেলতে পারবেন না জাতীয় দলের হয়ে। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে দুই পক্ষকে হুঁশিয়ার করেছে ফিফপ্রো। পেশাদার ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠনটি জানিয়েছে, খেলোয়াড়দের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করবে তারা।
‘বিদ্রোহী’ সুপার লিগে রয়েছে স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। ইংল্যান্ড থেকে যোগ দিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি ও টটেনহ্যাম হটস্পার। ইতালির তিন ক্লাব হলো জুভেন্টাস, এসি মিলান ও ইন্টার মিলান। মোট ২০টি দল অংশ নেবে এই প্রতিযোগিতায়। আপাতত ১২টির নাম প্রকাশিত হলেও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য থাকবে ১৫টি ক্লাব। আগের মৌসুমের পারফরম্যান্স বিচারে বাকি পাঁচটি দলকে কোয়ালিফাই করে আসতে হবে।
সুপার লিগের ঘোষণার পর সোমবার জরুরি সভার শেষে উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন বলেছেন, ‘কয়েকটি ক্লাবের স্বার্থের জন্য করা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ফুটবল বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সুপার লিগ একটি অর্থহীন প্রকল্প বলে আমরা একমত হয়েছি।... আমরা এই পরিবর্তনের অনুমতি দিচ্ছি না। এই লিগে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়রা তাদের জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবে না।’
একই দিনে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে ফিফপ্রো। তা তুলে ধরা হলো দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।
‘এই (সুপার লিগের) সিদ্ধান্ত কেবল ফুটবলের কাঠামোতে ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে নয়, খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারের ওপর ব্যবহারিকভাবে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে খেলোয়াড় এবং তাদের সংগঠনগুলোর মধ্যে অনেক উদ্বেগ ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’
‘ফুটবল তার নিজস্ব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এটা কেবল সমর্থকদের সঙ্গে ফুটবলের অতুলনীয় সম্পর্কই তৈরি করে দেয়নি, অন্য যেকোনো খেলাধুলার চেয়ে পেশাদার এই খেলাটির বিস্তারের চালিকাশক্তিও তৈরি করেছে।’
‘এটা টিকিয়ে রাখতে হলে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর ও সংহতিপূর্ণ সহযোগিতা জরুরি।’
‘তা অগ্রাহ্য করে নতুন কোনো প্রতিযোগিতা আয়োজনে হতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি। এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউরোপিয়ান ফুটবলের সম্ভাব্য ভাঙনের এই বিন্দুতে উপস্থিত হওয়া এমন একটি শাসন পদ্ধতির প্রতিচ্ছবি, যেখানে কিছু লোকেরা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষমতা উপভোগ করছে এবং যারা কিনা খেলাটির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে, সেই খেলোয়াড়রা ও ভক্তরাসহ বেশিরভাগই অবহেলিত হচ্ছে।’
‘বরাবরই আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের সম্পদ ও উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ফিফপ্রো, খেলোয়াড়দের ৬৪টি জাতীয় অ্যাসোসিয়েশন ও যে ৬০ হাজার খেলোয়াড়ের প্রতিনিধি আমরা, সবার কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য।’
‘যেকোনো পক্ষের নেওয়া খেলোয়াড়দের স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ, যেমন- জাতীয় দল থেকে তাদের বাদ দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করব আমরা।’
‘খেলোয়াড়দের ও এই শিল্পের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষায় খেলাটির সমস্ত স্তরকে সমর্থন করতে এবং বিদ্যমান ত্রুটিগুলো শুধরে নিতে আমরা সকল অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
Comments