ভারত সরকার সেরাম ও বায়োটেককে ৪৫০০ কোটি রুপি অগ্রিম দিয়েছে

ভারতে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দুই প্রতিষ্ঠানকে আগামী জুলাই পর্যন্ত শতভাগ মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউটকে তিন হাজার কোটি ও ভারত বায়োটেককে এক হাজার ৫০০ কোটি রুপি দেওয়া হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দুই প্রতিষ্ঠানকে আগামী জুলাই পর্যন্ত শতভাগ মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউটকে তিন হাজার কোটি ও ভারত বায়োটেককে এক হাজার ৫০০ কোটি রুপি দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

সূত্র জানিয়েছে, কোভিশিল্ড উৎপাদনকারী সেরাম ইনস্টিটিউট ও কোভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী ভারত বায়োটেককে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করার ফলে এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাকসিন উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় তহবিল থাকবে এবং দরকার হলে তারা উৎপাদনও আরও বাড়াতে পারবে।

গত সপ্তাহেই ভারত বায়োটেকের বেঙ্গালুরুর কারখানার জন্যে ৬৫ কোটি রুপি অনুদানের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে এই কারখানাটিকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে।

সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে সংশয়ের মাঝে এলো অগ্রিম অর্থ পরিশোধের এই সংবাদটি। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, নতুন কাঁচামাল কেনা, কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং আরও ভ্যাকসিন প্রস্তুত ও বিতরণের জন্যে এ দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে যথেষ্ট অর্থ নেই। সম্প্রতি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে ভ্যাকসিনের মজুত কমে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা আসাতে এ আশঙ্কাটি সবার নজরে আসে।

আজ সকালে পাঞ্জাব থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে আর মাত্র তিন দিনের ভ্যাকসিন মজুত রয়েছে। শুক্রবার অন্ধ্র প্রদেশ জানিয়েছিল, তাদের মজুত পুরোপুরি শেষ। চলমি মাসের শুরুর দিকে মহারাষ্ট্র জানিয়েছিল, ভ্যাকসিনের অভাবে মুম্বাই ও পুনেসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০টি ভ্যাকসিন কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় সরকার আগে জোর দিয়ে বলেছিল, ভ্যাকসিনের মজুতে কোনো ঘাটতি নেই। তবে, চলতি মাসের শুরুর দিকে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনেওয়ালা এনডিটিভিকে জানিয়েছিলেন, পুনেতে তাদের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ব্যবহার হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জুনের মাঝে উৎপাদন-ক্ষমতা বাড়াতে হলে তাদের তিন মাস সময় ও প্রায় তিন হাজার কোটি রুপি দরকার হবে।

সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেককে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সরকার ১ মে থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিন উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের বয়সভিত্তিক আওতা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়াতে (বর্তমানে শুধু যাদের বয়স ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে, তারা ভ্যাকসিন নিতে পারছেন) উৎপাদনকারীদের ওপর লাখো অতিরিক্ত ভ্যাকসিন সরবরাহের বাড়তি চাপ পড়বে।

এতে কেন্দ্র সরকারের ওপরও সমন্বিতভাবে বিভিন্ন রাজ্যে ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ পড়বে। এ কারণেই সম্ভবত রাজ্যগুলোকেও সরাসরি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, তারা তাদের মজুতের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে অন্যান্য রাজ্যের কাছে অথবা খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

বাকি ৫০ শতাংশ মজুত কেন্দ্র সরকারের জন্যে বরাদ্দ থাকবে এবং এর মূল্য হবে ডোজপ্রতি ১৫০ রুপি। এ ভ্যাকসিনগুলো সরকারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে বিনা মূল্যে জনগণকে দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে বিক্রয় মূল্য নির্দিষ্ট করে না দেওয়ার অনুরোধ আসার কারণে তারা উৎপাদনকারীদের সরাসরি রাজ্যগুলোর কাছে অথবা খোলা বাজারে ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতি দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উৎপাদনকারীরা জানান, তাদেরকে ভ্যাকসিনের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্যে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ডের পেটেন্টের জন্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে অর্থ পরিশোধ করেছে। এসব কারণেই মূলত তারা বিক্রয় মূল্যের ওপর কোনো বিধি-নিষেধ চাইছেন না।

ফ্রন্টলাইনার ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। ভারতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে এনডিটিভির প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি দেশটিতে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও দুই লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন আরও এক হাজার ৭৬১ জন।

সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে আনতে হলে ভ্যাকসিন দেওয়ার হারকে আরও অনেক বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা।

Comments