সংক্রমণ বাড়লেও পরীক্ষা কমেছে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন প্রায় সারাদেশে সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি করেছে ঠিক সেই সময় দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে। আক্রান্ত অনেকেই শনাক্তের বাইরে থেকে গেছেন। যে কারণে অনেকে নিজের অজান্তেই অন্যদের সংক্রমিত করছেন।
Corona test logo
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন প্রায় সারাদেশে সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি করেছে ঠিক সেই সময় দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে। আক্রান্ত অনেকেই শনাক্তের বাইরে থেকে গেছেন। যে কারণে অনেকে নিজের অজান্তেই অন্যদের সংক্রমিত করছেন।

এই পরিস্থিতে, জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সরকারিভাবে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন গতকাল সোমবার। পাশাপাশি বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষার ফি কমানোর সুপারিশ করেছেন তারা।

গত রোববার রাতে অনুষ্ঠিত ৩১তম সভায় কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘সংক্রমণ রোধে দ্রুততম সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করার বিকল্প নেই। কিন্তু সম্প্রতি দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে। প্রত্যেক শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা জরুরি।’

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে ৬ থেকে ১২ এপ্রিল পরীক্ষা করা হয়েছিল তিন লাখ ৪৬ হাজার ১৩৫টি নমুনা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা ৫৫ শতাংশ কমেছে।

গত বছরের ২১ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর থেকে চলতি মাসে প্রথমবারের মতো দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৩০ হাজার অতিক্রম করে। গত সপ্তাহে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ২০ হাজারের আশেপাশে ছিল।

এ ছাড়া, দৈনিক নমুনা পরীক্ষা গড়ে ১৫ হাজার ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে কম পরীক্ষা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ পজিটিভ বেশি হওয়ার অর্থ হলো অনেকেই শনাক্তের বাইরে থাকছেন। যারা নিজেদের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটি সবচেয়ে কম। আওয়ারওয়ার্ল্ডইনডেটা ডট ওআরজি-এর তথ্য অনুযায়ী, মালদ্বীপ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে এক হাজার ২৭২টি নমুনা পরীক্ষা করে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে, প্রতি এক হাজারে ভুটান ৮৫৩টি, ভারত ১৯১টি, শ্রীলংকা ১১৫টি, নেপাল ৮০টি ও পাকিস্তান ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে।

বৈশ্বিক তথ্য অনুযায়ী, ডেনমার্ক প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে চার হাজার ১৬৬টি নমুনা পরীক্ষা করে সবার উপরে অবস্থান করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতি হাজারে চার হাজার ১৬০টি, যুক্তরাষ্ট্র এক হাজার ১৯৩টি এবং যুক্তরাজ্য দুই হাজার আটটি নমুনা পরীক্ষা করছে।

চলতি বছরে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এরপর থেকে পজিটিভ ফলাফলের হার গত সপ্তাহে বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে।

আজ মারা গেছেন ৯১ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৫৮৮তে দাঁড়িয়েছে। যা দেশে মোট শনাক্তের এক দশমিক ৪৫ শতাংশ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পজিটিভি ফলাফলের হার সাত থেকে ছয় শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে সঙ্গ–নিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। পজিটিভ ফলাফলের দ্বিগুণ বা তারও বেশি নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে।’

জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছে, বাজারে কিটের মূল্য কমে যাওয়ায় বেসরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার ফি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

‘এটি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং অধিকসংখ্যক মানুষের সক্ষমতার মধ্যে আসবে। এ ছাড়া, সরকারিভাবে পরিচালিত নমুনা পরীক্ষার ল্যাবগুলোর ওপর চাপ কমাবে। এভাবে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা যাবে। যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুব গুরুত্বপূর্ণ’— মত পরামর্শক কমিটির।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago