মহামারিতে বেড়েছে অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা ও ব্যবসা
চলমান করোনা মহামারিতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে অ্যাম্বুলেন্স আমদানি। ফলে রাস্তায়ও বেড়েছে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৭৮৮টি অ্যাম্বুলেন্সের নিবন্ধন হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারক ও ডিলারদের অ্যাসোসিয়েশন বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা গত বছর অ্যাম্বুলেন্স আমদানিতে বেশি বিনিয়োগ করেছেন।’
আদ-দ্বীন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ইনচার্জ মো. মনসুর মামুন খান জানান, সহজে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রোগী ও তাদের স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স বেশি পছন্দ করছেন। ফলে এর চাহিদা বেড়েছে।
প্রতি ট্রিপ ৩৫০ টাকার বিনিময়ে এই হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা ঢাকার ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করে। অন্য হাসপাতালে রোগী পরিবহনের জন্য প্রতি ট্রিপে ৫২০ টাকা নেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য অতিরিক্ত ৩০ টাকা পরিশোধ করতে হয় বলে জানান তিনি।
মামুন খান আরও জানান, তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী বহনের জন্য আমরা দুটি অ্যাম্বুলেন্স রিজার্ভ রেখেছি।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে বেসরকারিভাবে প্রায় ৬১৩টি অ্যাম্বুলেন্স সেবা পরিচালিত হচ্ছে।
গত ছয় মাসে অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দেশে ফ্রিজার ভ্যানের প্রকট সংকট রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার এটাও একটা কারণ।’
তিনি জানান, করোনা রোগী বহনের পর অ্যাম্বুলেন্স পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ করার জন্য অনেক সময় চালকরা নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে ৫০০ টাকা বেশি দাবি করেন।
নিপ্পন অটোস ট্রেডিংয়ের মালিক ও বারভিডার সাবেক সভাপতি মান্নান চৌধুরী খসরু জানান, কাস্টমাইজড অ্যাম্বুলেন্সের জন্য শুল্ক কর চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধরা হয়। যেখানে সমপরিমাণ জায়গার যাত্রীবাহী গাড়ির জন্য শুল্ক কর প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
২০২০ সালে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি করায় এ বছর অ্যাম্বুলেন্স বিক্রি কমে যেতে পারে বলে যোগ করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মো. লিটন আলী সর্দার বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে পরিবহনের সময় কীভাবে তাদের পরিচর্চা করতে হয় আমাদের সংগঠনের আওতাধীন চালকরা ধীরে ধীরে তা শিখেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চালক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিয়মিত অ্যাম্বুলেন্স পরিষ্কার করি এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করি।’
লিটন আলী সর্দার জানান, তাদের সংগঠনের আওতাধীন অ্যাম্বুলেন্সগুলো অন্যান্য জরুরি সেবাও দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘সরকার পরিচালিত জরুরি সেবা ৯৯৯ এর অধীনেও আমরা কাজ করি।’
বিআরটিএ’র তথ্য মতে, ঢাকা শহরে চার হাজার ৭০২টি এবং সারাদেশে মোট ছয় হাজার ৯৩৮টি নিবন্ধনকৃত অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
আলআমিন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মালিক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আমরা গত বছর করোনা আক্রান্ত রোগী বহন করিনি। কিন্তু এ বছর আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে রোগী, তাদের স্বজন, চালক ও সহকারীদের পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।’
Comments