রাজনীতির অনন্য পুরোধা শওকত আলী ও ১৫০ মোগলটুলি

তিনটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদেরই সদস্য ছিলেন তিনি। তার ১৫০ মোগলটুলির বাড়িটি ছিল ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীদের মিলনক্ষেত্র। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে একটি দল প্রতিষ্ঠা হবে এমন সিদ্ধান্ত তার ১৫০ মোগলটুলির বাড়িতে বসেই হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার ছিল তার বাড়ি।
শওকত আলী। ছবিসূত্র: সালাউদ্দিন আহমেদ আজাদ (শওকত আলীর ছেলে)

তিনটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদেরই সদস্য ছিলেন তিনি। তার ১৫০ মোগলটুলির বাড়িটি ছিল ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীদের মিলনক্ষেত্র। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে একটি দল প্রতিষ্ঠা হবে এমন সিদ্ধান্ত তার ১৫০ মোগলটুলির বাড়িতে বসেই হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার ছিল তার বাড়ি।

কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ শওকত আলী। একসময় ঢাকার ১৫০ নং মোগলটুলিতে তার বাড়িতেই স্থাপিত হয়েছিল ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ও মুসলিম লীগ পার্টি হাউস। তখন এখানেই সে সময়ের প্রগতিশীল ছাত্র-যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলিত হতেন।

১৫০ নং মোগলটুলির কর্মীরা ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কার্যক্রম সেখান থেকেই পরিচালিত হতো। ১৫০ মোগলটুলির মূল তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন শওকত আলী। এ প্রসঙ্গে ছয় দফার অন্যতম প্রণয়নকারী  বাহাউদ্দিন চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘সাতচল্লিশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও ১৫০ মোগলটুলি বিরোধী রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ৫০ এর দশকে শওকত আলী এই বাড়িটি কিনলেও তিনি মূলত ৪০ এর দশক থেকেই এখানে বসবাস শুরু করেন। 

পুলিশের লাঠি চার্জে আহত শওকত আলীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। ১১ মার্চ, ১৯৪৮। ছবি সূত্র: সালাউদ্দিন আহমেদ আজাদ (শওকত আলীর ছেলে)

কলকাতা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান, জহিরুদ্দিন, নাঈমুদ্দীনের মতো নেতারা যখন এসেছিলের তখন ১৫০ মোগলটুলি পার্টি হাউসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন শওকত আলী। বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক বসবাসকারী পার্টি কর্মীদের খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সব ব্যবস্থা শওকত আলীই করতেন।

বঙ্গবন্ধু দেশভাগের পরে সর্বপ্রথম আশ্রয় নিয়েছিলেন শওকত আলীর ১৫০ নম্বর মোগলটুলির বাড়িতেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছিলেন শওকত আলীর বাড়ি সম্পর্কে, “১৫০ মোগলটুলীতে প্রথমে উঠব ঠিক করলাম। শওকত মিয়া মোগলটুলী অফিসের দেখাশোনা করেন। মুসলিম লীগের পুরানা কর্মী। আমারও বন্ধু। ঘোড়ার গাড়ি ঠিক করলাম, ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে পৌঁছে দিতে। দেখলাম, রসিক গাড়ওয়ান মোগলটুলী লীগ অফিস চেনে। আমাকে বললো, ‘আপনি লীগ অফিসে যাইবেন, চলেন সাব আমি চিনি’। পয়সাও বেশি নিল বলে মনে হলো না। অনেক গল্প শুনেছি এদের সম্পর্কে। কিন্তু আমার সাথে দর কষাকষিও করল না।”

আরেক জায়গায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, "শামসুল হক সাহেব ও শওকত সাহেব আমাকে পেয়ে খুবই খুশি। শওকত আমাকে নিয়ে কি যে করবে ভেবেই পায় না। তার একটা আলাদা রুম ছিল। আমাকে তার রুমেই জায়গা দিলো। আমি তাকে শওকত ভাই বলতাম।"

কেবল কী তাই, তার বাড়ি ছিল গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন। সংবিধানের মূলনীতি কমিটি আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, মেডিকেল কলেজের আন্দোলনের সূতিকাগার।

কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ শওকত আলীর জন্ম পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে ১৯১৮ সালে। তার বাবা শমশের আলী ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, মা মেহেরুননেসা খাতুন গৃহিণী। মাত্র ২ বছর বয়সেই মাকে হারিয়েছিলেন শওকত আলী। এরপর মূলত তার মামা মামীর কাছেই বেড়ে ওঠা। তার বাবা অবশ্য আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছিলেন। মুসলিম হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভর্তি হলেন আবার জগন্নাথ কলেজেই। এই কলেজ থেকেই বি কম পাশ করে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে সম্পন্ন করতে পারলেন না। শওকত আলী ছিলেন তমদ্দুন মজলিশের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।   ১৯৪৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর যখন রশিদ ভবনে অধ্যাপক আবুল কাশেম একটি সভার আয়োজন করলেন এবং তারপর সেই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ হিসেবে "তমদ্দুন মজলিশের রাষ্ট্রভাষা উপকমিটি" গঠিত হলো তখন শওকত আলী ছিলেন এই কমিটির সদস্য। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২৩ জুনের সম্মেলনের আয়োজনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন শওকত আলী।

তার উদ্যোগে ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ শওকত আলীর বাসভবন এবং কর্মী শিবির অফিসকে ঘিরে বেশ কয়েক মাসের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার পর ২৩ জুনের কর্মী সম্মেলনে দলের ঘোষণা দেয়া হয়। শওকত আলীর অনুরোধে কলকাতা থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি মামলা পরিচালনার কাজে ঢাকায় এলে তিনি শওকত আলীকে মুসলিম লীগ ছেড়ে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এরপর শওকত আলী এ পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের নেতাদের নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। 

১৫০ মোগলটুলি ঢাকা ওয়ার্কার্স ক্যাম্প। শওকত আলীর বাড়ি। পূর্ব পাকিস্তানের অজস্র আন্দোলনের সূতিকাগার। ছবি সূত্র- সালাউদ্দিন আহমেদ আজাদ (শওকত আলীর ছেলে)

শওকত আলীর এক্ষেত্রে অবদানের কথার বিষয়ে বলা যায় আবার বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কথা। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, "কর্মী সম্মেলনের জন্য খুব তোড়জোড় চলছিল। আমরা জেলে বসেই সেই খবর পাই। ১৫০ মোগলটুলীতে অফিস হয়েছে। শওকত মিয়া সকলের খাওয়া ও থাকার বন্দোবস্ত করত। সে ছাড়া ঢাকা শহরে কেইবা করবে?"

এসময় কর্মী শিবিরের প্রধান নেতা ছিলেন শামসুল হক। কামরুদ্দীন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান, আবদুল আউয়াল, মুহম্মদ আলমাস, শামসুজ্জোহা প্রমুখ।

মুসলিম লীগের আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের নেতারা মুসলিম লীগের অন্যায় কাজগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যেই এখানে কর্মী শিবির গড়ে তুলেছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ সালে যখন  আসামের ধুবড়ী জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকায় এলেন তার সঙ্গে শওকত আলীর আলোচনা হলো। শওকত আলী মওলানা ভাসানীকে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার কথা জানিয়েছিলেন। এসময় মওলানা ভাসানী আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করছিলেন।

শওকত আলীর সঙ্গে তার প্রাথমিক আলোচনা সেখানেই হয়। এই আলোচনার সূত্র ধরে নতুন দল গঠনের জন্য একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন শওকত আলী। সেজন্যে ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। মওলানা ভাসানী সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এসময় খোন্দকার আবদুল হামিদের সঙ্গে পরামর্শ করে শওকত আলীর উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক করে অন্যদেরসহ একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। এই সাংগঠনিক কমিটি ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এক সম্মেলন আহ্বান করে। রোজ গার্ডেনে ২৩ জুনের বিকেল ৩টায় সম্মেলন শুরু হয়। সেখানেই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত  হয়।

কেবল তাই না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করা হবে। বিষয়টি জানাজানি হলে সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মাওলানা ভাসানীকে গ্রেপ্তার করার কথা লোকমুখে শোনা যায়। তখন কেবল দলের জন্ম হচ্ছে। আর মওলানা ভাসানীকে যদি আটক করে তবে তো সর্বনাশ। তখন মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখতে হয়েছিল। এরপর তার গায়ে কম্বল পেঁচিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে সম্মেলন শুরুর দুই দিন আগে ভাসানীকে রোজ গার্ডেনে নিয়ে যাওয়ার মূল নায়ক শওকত আলী।

আজকের যে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এই সংগঠনগুলোর পেছনের অন্যতম কারিগর শওকত আলী। শুরুতে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। বঙ্গবন্ধু, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, আতাউর রহমান খান তারা বেশিরভাগ সময়েই থাকতেন কারাগারে। তখন দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হতো শওকত আলীকে। তখন কর্মীরা তার বাড়িতে এসে থাকতো, আবার যখন তারা কারাগার থেকে ছাড়া পেতেন তাদের প্রধান গন্তব্যই থাকতো ১৫০ মোঘলটুলি। সে দলের যখন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের জন্য শওকত আলী ছিলেন বিশাল এক আশ্রয়।

শওকত আলীর ১৫০ মোগলটুলি ছিল সে সময়ের প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিবিদের মিলনকেন্দ্র। শওকত আলীর নেতৃত্বেই গড়ে তোলা হয়েছিল সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী। যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে।

শওকত আলী আর তার কর্মীদের অসম্ভব পরিশ্রম আর প্রচারণায় ঢাকা মহানগর মুসলিম লীগের নির্বাচনে হাশিম সোহরাওয়ার্দী গ্রুপ জিতেছিল। আর এই মোগলটুলি থেকে দাঁড়িয়েই টাঙ্গাইলের শামসুল হক পাকিস্তান পরবর্তী প্রথম উপনির্বাচনে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নিকে হারিয়েছিলেন।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত বাংলা ভাষা আন্দোলন মাঝে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম। ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট, ১৯৫৩ সালের পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ১৯৫৫ এর গণপরিষদ নির্বাচন, আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ, ১৯৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ৭০ এর নির্বাচন এবং সর্বশেষ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সর্বক্ষেত্রেই শওকত আলীর ভূমিকা ছিল অনন্য। যিনি সামনে থেকে নেতৃত্বের বদলে পেছন থেকে সামলেছেন দলকে, তৃণমূলকে দাঁড় করিয়েছেন নিজের সর্বস্ব দিয়ে। কেবল কি দল, এ দেশকে তিনি কোন জিনিসটি দিতে কার্পণ্য করেছেন? প্রতিটি গণআন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতেও তার ত্যাগ ছিল অপরিসীম।  এ জন্য তাকে জেলেও যেতে হয়েছিল বারবার। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম হরতাল পালিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। এই হরতালে শওকত আলীর ভূমিকা ছিল অসামান্য। বিশেষ করে পিকেটিংয়ের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মিছিলের  এক পর্যায়ে তৎকালীন পুলিশের আইজিকে সচিবালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় চরম  পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আহত অবস্থায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ৫২'র সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন শওকত আলী। ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথের মিছিলে ঢাকা মেডিকেল প্রাঙ্গণে ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অপরাধে ১৯৫২ সালের ২ মার্চ শওকত আলীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর তো তিনি বহুদিন কারাবন্দী ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক মুক্তিযোদ্ধা গোপনে এই বাড়িতে আসতেন। তাঁর শওকত আলীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন এবং এখানে খাওয়া দাওয়া করতেন। শওকত আলী তাদের টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করতেন। এই বাড়িটি কয়েকবার রাজাকারদের আক্রমণের শিকার হয়, শওকত আলী ও তার পরিবারকে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল।

শওকত আলী রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনেও ভীষণ উদারমনা ছিলেন। কোন সংকীর্ণতা, পরশ্রীকাতরতা, লোভ স্পর্শ করতে পারেনি তাকে। দলের কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীরও তিনি ছিলেন পরম আশ্রয়। এমন নিঃস্বার্থ রাজনীতিবিদ খুব কমই এসেছে বাংলায়। ক্ষমতার লোভ, লালসা বিন্দুমাত্র গ্রাস করতে পারেনি তাকে। আজীবন কেবল দিয়েই গেছেন দেশের জন্য, দলের জন্য, অকাতরে দিয়েছেন। কিছু পাওয়ার বিন্দুমাত্র প্রত্যাশা করেননি কখনো।

এই কিংবদন্তি রাজনীতিবিদের মৃত্যু ছিল ভীষণ করুণ। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট যখন  বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের হত্যাকাণ্ডের খবর শুনলেন তিনি কিছুক্ষণ পরই এই আঘাত সইতে না পেরে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়েছিল তার। এর তিনদিন পর আগস্ট মাসের  ১৮ তারিখে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল মারা যান শওকত আলী।

কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ভাষা সৈনিক শওকত আলীর জন্মদিন ছিল গতকাল ২০ এপ্রিল। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো এই কিংবদন্তী রাজনীতিবিদের প্রতি।

তথ্যসূত্র:

অসমাপ্ত আত্মজীবনী/ শেখ মুজিবুর রহমান

পূর্ব বাংলা ভাষা আন্দোলন  এবং তৎকালীন রাজনীতি/ বদরুদ্দিন ওমর

ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে - কতিপয় দলিল - বদরুদ্দিন ওমর

আহমাদ ইশতিয়াক [email protected]

আরও পড়ুন:

সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে যিনি উৎসর্গ করেছিলেন নিজের প্রাণ

১৯ এপ্রিল ১৯৭১: প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ১৮ নির্দেশনা

১৮ এপ্রিল ১৯৭১: বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন

স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সূচনা, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের শপথ

১৬ এপ্রিল ১৯৭১: প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিসভার শপথের অপেক্ষা, ঢাকায় কারফিউ শিথিল

১৫ এপ্রিল ১৯৭১: নিভৃতে কেটেছে বাংলা নববর্ষ, ভয়ে-আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ে মানুষ

১৩ এপ্রিল ১৯৭১: চারঘাট গণহত্যা ও ঘটনাবহুল একটি দিন

১২ এপ্রিল ১৯৭১: বালারখাইল গণহত্যা ও ঘটনাবহুল একটি দিন

১১ এপ্রিল, ১৯৭১: দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান তাজউদ্দীন আহমদের

১০ এপ্রিল: মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

53m ago