ফুটপাত-রাস্তায় ময়লার ডাম্পিং স্টেশন, ভোগান্তিতে পথচারী

রাজধানীতে হেঁটে চলার সময় পথচারীদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ফুটপাত বসানো দোকান ও রাস্তায় পার্কিং করে রাখা গাড়ি। কোনো না কোনো দিন কর্তৃপক্ষ ফুটপাত ও রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে দেবে এমনই প্রত্যাশা সবার।
নতুনবাজার থেকে প্রগতি সরণী যাওয়ার পথে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে তৈরি ডিএনসিসি’র বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন। ছবি: এসকে এনামুল হক

রাজধানীতে হেঁটে চলার সময় পথচারীদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ফুটপাত বসানো দোকান ও রাস্তায় পার্কিং করে রাখা গাড়ি। কোনো না কোনো দিন কর্তৃপক্ষ ফুটপাত ও রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে দেবে এমনই প্রত্যাশা সবার।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেই যখন ফুটপাত ও রাস্তায় বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে রাখে, তখন নগরবাসীর প্রত্যাশার আর কোনো জায়গা থাকে না।

বাড্ডা থেকে নতুনবাজার যাওয়ার পথে পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারেন। কিন্তু, নতুনবাজার থেকে প্রগতি সরণী যাওয়ার পথে সেটা আর সম্ভব হয় না। কারণ, ফুটপাত দখল করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) তৈরি করেছে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নামক বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন। ফলে পথচারীদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। এছাড়া ময়লা বহনকারী ভ্যান ও গাড়ি ফুটপাতের পাশে দীর্ঘ সারি দিয়ে রাখা হয়।

এক সময় রাজধানীতে এসটিএস ছিল না। তখন রাস্তার ওপর স্থাপনকৃত সিটি করপোরেশনের পুরাতন কনটেইনারে ময়লা রাখা হতো। দুর্ভাগ্যবশত, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং পথচারীদের কথা বিবেচনা না করে স্থাপিত এসটিএসগুলো বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে।

ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তরে এক হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার বর্গফুটের ৫৬টি এসটিএস আছে।

নতুনবাজারের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা মো. সুমন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পথচারীদের সুবিধার জন্য ফুটপাত পরিষ্কার রাখা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। অথচ, তারাই ফুটপাত দখল করে রেখেছে।’

এসটিএসটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, এর একটি অংশ প্রধান সড়ক দখল করে আছে। ফলে এসটিএসটি পার হওয়ার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলসহ ছোটো যানগুলোকে প্রাইভেট কার ও বাসের সঙ্গে রাস্তার মাঝ দিয়ে চলতে হয়।

সাইক্লিস্ট তানজিম কিরণ বলেন, ‘সাইকেল নিয়ে আমরা সাধারণত মাঝরাস্তায় যাই না। ফুটপাতের খুব কাছ দিয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু এখানে এলে এই স্টেশন ও পার্ক করা গাড়িগুলোর কারণে আমাদের মাঝরাস্তা দিয়ে চলতে হয়।’

এসটিএসটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের সুপারভাইজার সাইফুল ইসলামের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাড্ডা, বারিধারা, নুরেরচালা ও খিলবারিরটেক এলাকা থেকে সংগৃহীত ময়লা নতুনবাজারের এই এসটিএসে ফেলা হয়।

গাড়ি পার্কিং বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা না থাকায় রাস্তায় পাশেই আমাদের গাড়িগুলো পার্ক করতে হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভ্যানগুলোও এখানে রাখা হয়। আমাদের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে এই এসটিএসে ২২টি ভ্যান রয়েছে।’

১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, ‘এই এসটিএসটি স্থাপনের আগে আমাদের এলাকার ময়লা বিশ্বরোড এবং যত্রতত্র খোলা জায়গায় ফেলা হতো। এই এসটিএসটি স্থাপন করায় আমরা একটি নির্ধারিত জায়গা পেয়েছি ময়লা ফেলার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা ফুটপাত দখল করে রেখেছে, আবার বারিধারা সোসাইটি দুর্গন্ধের অভিযোগও করেছে। কিন্তু, আমরা এটা ছাড়া আর কোনো খোলা জায়গা খুঁজে পাইনি।’

যোগাযোগ করা হলে ডিএনসিসি‘র অতিরিক্ত মুখ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এসএম শফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৫৬টি এসটিএস রয়েছে এবং আমরা আরও চারটি তৈরির কাজ করছি। জায়গা খুঁজে পাওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি।’

নতুনবাজারের এসটিএসটি কবে স্থাপন করা হয়েছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে না পারলেও তিনি বলেন, এটি কয়েক বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে।

এসটিএসটি ফুটপাত দখল করে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরিষ্কারভাবে কোনো উত্তর না দিয়ে আবারও জায়গা সংকটের কথা তুলে ধরেন।

ময়লা বহনকারী গাড়িগুলোর পার্কিংয়ের জায়গার বিষয়ে জানতে চাইলে সন্তোষজনক কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আমরা রাস্তার পাশে গাড়ি রাখার পক্ষপাতী না। এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরের অপরিকল্পিত পরিস্থিতির কারণেই কর্তৃপক্ষ বারবার এই ধরণের স্থাপনার জন্য এমন জায়গা নির্ধারণ করে। এই উদ্যোগগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এ ধরনের প্রকল্পের জন্য জায়গা নির্ধারণের সক্ষমতা সরকারের আছে। নির্মাণ শুরুর আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যার সমাধান করা যায়।’

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

The government last night gave magistracy power to commissioned army officers with immediate effect for 60 days in order to improve law and order.

7h ago