‘মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি’
পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশন ভবনের নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউনে আজ শুক্রবার ভোররাতের আগুনে অন্তত চার জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন। তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
সেই ভবনের ভাড়াটিয়া ইউনুস মোল্লা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটে থাকি। চালের ব্যবসা করি। বাসার নিচে “আগুন আগুন” চিৎকার শুনে জেগে উঠি।’
‘হঠাৎ ঘরে ধোঁয়া ঢুকতে শুরু করলে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি এক বাথরুমে ঢুকি। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী আরেক বাথরুমে ঢুকে। সবাই পানিতে ভিজতেছিলাম, যাতে আগুনে না পুড়ি।’
‘আশা করছিলাম লোকজন আমাদের উদ্ধার করবে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই স্থানীয়রা আমাদের ফ্ল্যাটের গ্রিল ভেঙে উদ্ধার করে।’
‘মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি,’ বলে যোগ করেন তিনি।
ভবনের অপর ভাড়াটিয়া মিরপুর বাংলা কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইদুল আলম আকাশ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রায় সাত বছর থেকে এই বাসার তিনতলায় ভাড়া আছি। মা-বাবা ও বোন থাকেন। সেহরির জন্যে ভোররাত ৩টার দিকে উঠি। সেহেরির প্রস্তুতি চলছিল।’
‘আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটের দিকে পোড়া গন্ধ পাই। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম না গন্ধটা কোথায় থেকে আসছিল। ঘরের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া আসতে শুরু করে। তখন কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।’
‘বারান্দার গ্রিল দুর্বল ছিল। আমরা সবাই ধাক্কা দিয়ে গ্রিল ভেঙে ফেলি। বাসার নিচে লোকজন “আগুন, আগুন” বলে চিৎকার করছিল। তারপর ফায়ার সার্ভিসের মই আসে এবং আমরা নেমে যাই।’
‘নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ধোঁয়ায় আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
‘আমরা যখন সাত বছর আগে আসি তখন বাসার নিচে কোনো গোডাউন ছিল না। নিমতলীর ঘটনার প্রায় তিন বছর পর আমরা ভাড়া আসি। সেই ঘটনার কথা আমাদের মনে ছিল। এখানে কোনো গোডাউন নেই দেখেই আমরা বাসা ভাড়া নিয়েছি।’
‘বাড়ির মালিক মারা যাওয়ার পর তার ছেলে বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান ও গোডাউন ভাড়া দিতে শুরু করেন।’ ‘এতে আমাদের আপত্তি ছিল’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়েই এখানে আছি।’
আরমানিটোলায় আগুনে মারা যাওয়া সুমাইয়া ইডেন কলেজে স্নাতক (ইংরেজি বিভাগ) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মা-বাবা, বোন, দুলাভাই ও ভাই আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মৃত সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যরা ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
হাসপাতালে রোগীদের ছবি তোলা নিষেধ থাকায় আরমানিটোলায় আগুনে আহতদের যারা ডেইলি স্টার’র সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে আগুনের যে ঘটনা ছিল তার পুনরাবৃত্তি আমার কাছে মনে হচ্ছে। সেখানেও একটি বড় ভবন ছিল। নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন ছিল। ভবনের বাকি অংশে মানুষ থাকতেন। সেখানে আগুনে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছিল। এরপর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনা ঘটল। সেখানেও ভবনের নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান ও গোডাউন ছিল। বাকি অংশে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতো।’
কিন্তু, এসব থেকে কেউ কোনো শিক্ষা নিচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
Comments