স্পেনে সহজ হলো অভিবাসী আইন, বৈধতা পাবে বাংলাদেশিরাও
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ স্পেনে অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব আইন আরও সহজ হলো। টানা দুই বছর স্পেনে বসবাসের ডকুমেন্টসহ ছয় মাস বৈধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে মিলবে এই বৈধতা। এতে করে দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার বাংলাদেশির নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম হলো। সম্প্রতি স্পেনের একটি আদালতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ স্পেনের গ্রানাডার একটি আদালত একজন অভিবাসী নারীর মামলার রায়ে এমন আদেশ দেন। এতে অভিবাসী বাংলাদেশিরাও উপকৃত হবেন।
ইউরোপের একমাত্র দেশ স্পেন যেখানে অভিবাসন প্রক্রিয়া খুব সহজ এবং নমনীয়। যে কেউই খুব সহজেই এখানে থাকার ইচ্ছাপোষণ করলে ন্যূনতম শর্তে বসবাস করার সুযোগ পান। তাই অভিবাসীদের কাছে পছন্দের একটি দেশ স্পেন। অভিবাসীদের স্বাধীনভাবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে প্রথম।
অভিবাসীরা ১০ বছর নিয়মিত থাকার পর স্পেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া তিন বছর নিয়মিত থাকার পর যদি তাদের সন্তান জন্ম নেয় তাহলে সে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পায়।
নতুন আইন অনুযায়ী এক সাথে টানা দুই বছর স্পেনে বসবাসের ডকুমেন্টের সাথে ৬ মাস বৈধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৈধ হওয়া যাবে। এজন্য কোনো কোম্পানির কিংবা শপের অনুমতির কাগজ লাগবে না যা আগে প্রযোজ্য ছিল। অন্যদিকে আইন অনুযায়ী এখন অনিয়মিতভাবে বসবাসকারী বাবা-মায়ের সন্তান জন্ম হলেও সে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পাবে বা দুজনের মধ্যে একজন স্পেনে নিয়মিতভাবে বসবাস করলে তাদের সন্তানও স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পাবে। এর বাইরে অন্য অভিবাসীরা এই নিয়মে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ অভিবাসী কাজের দাবি ও নাগরিকত্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহী জানান, নতুন আইনের আওতায় বিভিন্ন অ্যাসাইলাম নিয়ে স্পেনে থাকা প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসীর বৈধ হওয়ার সুযোগ আছে। তিনি এজন্য কাউকে কোনো দালাল কিংবা উকিলের শরণাপন্ন হয়ে সর্বস্বান্ত না হওয়ার আহবান জানান।
তিন বছর ধরে বৈধতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছেন বাংলাদেশের কুমিল্লার আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিবাসীদের আন্দোলনেও নিয়মিত যুক্ত ছিলেন। নতুন এই সুযোগ আসার খবরে বেশ খুশি তিনি। বলেন, ‘ইতালি, গ্রিস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ অন্য দেশে নাগরিকত্ব পাওয়াটা অনেক জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। তাই স্পেনকেই বেছে নিয়েছিলাম। এতদিন পর বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ আসাতে খুব ভাল লাগছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুতাসিমুল ইসলাম বলেন, নতুন এই আইনে বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হলে বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটসহ দূতাবাসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
যারা আবেদন করতে পারবেন
স্পেনে দুই বছর থেকে বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন অ্যাসাইলাম নিয়ে কাজের পারমিশন পেয়ে কমপক্ষে ছয় মাস কাজ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ নেই তারা এই আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া যাদের আগে স্পেনের রেসিডেন্স কার্ড ছিল কোনো কারণে কার্ড বাতিল হয়ে গেছে, তাদের কর্মসংস্থান রেকর্ড প্রতিবেদন (বিদালাবেরাল) ছয় মাসের যদি থাকে তারা এ সুবিধার আওতায় পড়বেন।
এই সুবিধা নিতে কোনো কাজের কন্ট্রাক্টের প্রয়োজন হবে না বা আরাইগো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না। শুধু বিদালাবেরালের কপি এবং বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হলেই এখন বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবে।
যারা অ্যাসাইলাম কিংবা কাজের পারমিশন ছাড়া স্পেনে বসবাস করছেন তারাও অভিবাসী হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগবে।
তাছাড়া বৈবাহিক সূত্রে স্পেনের নাগরিকত্ব পেতে হলে পূর্বে তিন বছর সময় লাগতো। কিন্তু বর্তমান আইনে তা দুই বছর করা হয়েছে এবং আরও বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সময় উপযোগী কিছু সংশোধন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিরা https://youtu.be/3UQmlYPt7ug এই ভিডিও লিংকে গিয়ে আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া সর্ম্পকে ধারণা নিতে পারেন।
স্প্যানিশ পাসপোর্টধারী বাঙালিদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যাদের অনেকে এখন পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তাছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য করাটাও এখানে অনেক সহজ বিধায় বাংলাদেশিরা এখানে সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়ার আগপর্যন্ত থাকতে পারে আর এই কারণেই মূলত এখানে বাংলাদেশিরা অভিবাসী হয়।
(কবির আল মাহমুদ, প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক, স্পেন)
Comments