ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবে জড়িতদের বিচার চেয়ে হেফাজত নেতার পদত্যাগ

হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম কাসেমী সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন। একইসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আব্দুর রহিম কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম কাসেমী সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন। একইসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আজ শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহিম কাসেমী বলেন, ‘আমি আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতে ইসলামের সব কার্যক্রম ও জাতীয় এবং জেলা কমিটির পদসমূহ থেকে পদত্যাগ করছি। যাদের প্ররোচনায় দেশ ও জনগণের জানমালের এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।’

আজ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আব্দুর রহিম কাসেমীর সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তা বাতিল করে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের ডাকে যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তা নজিরবিহীন ও অমানবিক। দেশ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সমস্ত কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকি এবং আমার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সমস্ত মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক ও ছাত্রদের এ সমস্ত দেশ এবং ইসলামবিরোধী কাজে যোগদান না করতে বাধ্য করি।’

তিনি বলেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণ ও ক্ষয়ক্ষতি করা হয়। ২৭ ও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে যে সমস্ত ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাতে আমি এবং আমার মাদ্রাসার কোনো ছাত্র অংশগ্রহণ করিনি।’

‘এমতাবস্থায় কে বা কারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার নাম যুক্ত করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা নিতান্তই প্রতিহিংসামূলক মিথ্যাচার এবং সম্পূর্ণ বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘অতএব আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই- আমি হেফাজতে ইসলামের চলমান কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নই। তাদের সব প্রকার নাশকতামূলক কার্যক্রম শরীয়ত সম্মতভাবে অবৈধ মনে করি।’

গত বছরের ১ ডিসেম্বর মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে আব্দুর রহিম কাসেমীকে জামিয়া ইউনুছিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সব পদ ও শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মাদ্রাসাটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের (মজলিশে ইলমিয়ার সদস্যরা) সদস্যরা জরুরি বৈঠক করে এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে মাদ্রাসার মোহতামিম মুবারকুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে জানানো হয়।

নোটিশে বলা হয়, আব্দুর রহিম কাসেমী গত ১২ নভেম্বর যোহর নামাজ শুরুর আগে ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের ভুল বুঝিয়ে বিক্ষোভ ও বিদ্রোহে লেলিয়ে দেন। সেসময় তিনি মাদ্রাসার প্রবীণ একজন ওস্তাদের কক্ষের দরজায় লাথি মেরে তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং সন্ত্রাসী কায়দায় তাকে উঠিয়ে নিয়ে যান। তিনি শতবর্ষী মাদ্রাসাটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নষ্ট করে নিজ নেতৃত্বদানের লোভে বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি করেন। 

এ প্রসঙ্গে আব্দুর রহিম কাসেমী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা জামিয়া ইউনুছিয়া ইসলামিয়াতে খেদমতে ছিলাম। কিন্তু, মতাদর্শগত ভিন্নতার কারণে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ১-১২-২০ তারিখে জামিয়ার সকল দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’

আব্দুর রহিম কাসেমীর পদত্যাগের বিষয়ে জানতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সভাপতি সাজেদুর রহমান এবং হেফাজতের জেলা সাধারণ সম্পাদক মুবারকুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডসহ নানা কারণ দেখিয়ে আব্দুল্লাহ হেফাজত ইসলামের নায়েবে আমিরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা, জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস ও আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনসহ ৫৮টি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে।

এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৬টি মামলায় এজাহারনামীয় ৪১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৩৯ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৩৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আরও পড়ুন:

‘রণক্ষেত্র’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

১২ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-নোয়াখালী রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

গ্যাস নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে, দুর্ভোগ সীমাহীন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ, রেলস্টেশন ভাঙচুর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় মামলা ৩, আসামি ৬৫০০

ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত আশিকের

সরাইলে ফাঁড়িতে হামলা, ১৫ পুলিশ সদস্য আহত

হরতাল চিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাইওয়ে থানা ও পুলিশ লাইনে হামলা, গুলিতে নিহত ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমি অফিস, গণগ্রন্থাগার, আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে আগুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নিহত বেড়ে ৬ হেফাজতের হরতালে দোকান ও যান চলাচল বন্ধ

উচ্ছৃঙ্খলতা বন্ধ করুন, নইলে কঠোর অবস্থান নেবে সরকার: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যারিকেড: ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-নোয়াখালী ট্রেন চলাচল বন্ধ

আবারও পোড়ানো হলো ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago