নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে

ভাইরাস কি চোখে দেখতে পায়? সে কি শুনতে পায়? সে কি প্রাণী? এসবের উত্তর, না। এমনকি অন্যের উপস্থিতি ছাড়া বাঁচতেও পারে না।
ছবি: রাশেদ সুমন

ভাইরাস কি চোখে দেখতে পায়? সে কি শুনতে পায়? সে কি প্রাণী? এসবের উত্তর, না। এমনকি অন্যের উপস্থিতি ছাড়া বাঁচতেও পারে না।

কিন্তু এই ভাইরাস শুনতে, দেখতে ও বলতে না পারলেও তার উপস্থিতি ঠিকই জানান দিতে পারে। যা কোনো মানুষের পক্ষে এতোটা ঘটা করে জানান দেওয়া সম্ভব নয়।

যে করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, মানুষ কিন্তু সেই ভাইরাসকে দেখতে পায়নি (শুধুমাত্র ল্যাবে গবেষণা কাজে জড়িতরা ছাড়া)। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে যেমন ঢুকে পরেছে হোয়াইট হাউসে, ঠিক তেমনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ, আমাজনের গহীন বন থেকে হিমালয়, সর্বত্রই চলছে করোনাভাইরাসের রাজত্ব। হাজার বিলিয়ন ডলার খরচ করে যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে তা এই ভাইরাসের কাছে নস্যি। সারা পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গলদঘর্ম এই ক্ষুদ্র ভাইরাসের শক্তির কাছে।

বহুরূপী এই ভাইরাস রূপ বদলাচ্ছে প্রতি ক্ষণে, আর তার সঙ্গে সারাবিশ্বের মানুষের কপালের চিন্তার ভাঁজটা হচ্ছে আরও ঘন ও গভীর।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই চিন্তার ভাঁজটা যেনো বেশ গভীর। কারণ, দিনের পর দিন লকডাউন দিয়ে জনজীবন স্থবির করে অর্থনীতির চাকা বন্ধ করে দেশ চালানো যেমন সম্ভব নয়, তেমনি জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা বা উৎসাহ দিয়ে আচরণগত পরিবর্তন করাও দুঃসাধ্য কাজ। তাহলে বাংলাদেশ করবে কী?

এ নিয়ে নানান মহলের নানান মত। কেউ বলছেন, জীবিকা আগে। কেউ বলছেন, জীবন আগে। এই মতপার্থক্য বাড়িয়ে দিচ্ছিলো হাসপাতালে করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা। যেহেতু লকডাউন দিলে সরকারের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে জনগণের খাবারের ব্যবস্থা করার, তাই চালু করলো ‘চলাচল সীমিত’।

তারপর একে একে তিন সপ্তাহ চললো কথিত চলাচল সীমিত বা জনগণের ভাষায় লকডাউন।

ফলাফল কি কিছু পাওয়া গেলো? এখনি হয়তো চূড়ান্ত করে বলা যাবে না যে কিছু ফলাফল পাওয়া গেছে। তবে বলাই চলে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়েছে। যেহেতু মানুষ এই লকডাউনের ছুটি উপভোগে ছুটেছিল গ্রামে।

এবার লকডাউনের সময়সীমা শেষ হতে না হতেই সরকার শপিংমল খোলার ঘোষণা দিয়েছে। তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন হলো- ভাইরাসের সমস্যা তো মোকাবিলা করতে হবে বিজ্ঞান দিয়ে, অর্থনীতি বা রাজনীতি দিয়ে নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনীতি থাকার পরেও তো আমরা দেখেছি লাশের সারির দীর্ঘ মিছিল। অর্থনীতিকে পাশ কাটিয়ে তারা কিন্তু বিজ্ঞানকেই বেছে নিয়েছে। তার সুফলও তারা পাচ্ছে।

কোটি মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা করেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাই যদি হয়, আমাদের যে উন্নয়নের গল্প শোনানো হয় তার সুফল কি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি? যদি না পৌঁছায় তবে অর্থনীতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর হয়েছে, সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর হয়েছে সেটা বলা যাবে না। তাই শপিংমলসহ অন্যান্য বিধি-নিষেধ আস্তে আস্তে তুলতেই হবে।

বিজ্ঞানকে আমরা যেহেতু বিজ্ঞান দিয়ে মোকাবিলা করতে পারছি না, তাই জীবনের বিনিময়ে মোকাবিলা করতে হবে। যার জন্য রাষ্ট্রের দায় নেই। আপনি যদি মাস্ক পরে রাস্তায় বের হন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তবেই পারবেন নিজেকে সুরক্ষিত করতে। দেশকে সুরক্ষিত করতে। স্বাস্থ্য আপনার, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আপনার।

তবে হ্যাঁ, শপিংমল যেহেতু খোলা, সরকারের দায়িত্ব হবে শপিংমলগুলো যেনো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে তার ব্যবস্থা করা। কারণ এতে শপিংমলে একই সময়ে মানুষের ভিড় কমবে। আর মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখা মাত্রই জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু বাস্তবতা যেনো দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয় তার দায় নাগরিক হিসেবে আমাদেরও আছে। নতুবা মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে, বাড়বে হাহাকার, পঙ্গু হবে দেশের অর্থনীতি।

Comments

The Daily Star  | English

Banks to freeze accounts of Orion Group chairman, MD, four others

The Bangladesh Financial Intelligence Unit (BFIU) has instructed banks in the country to freeze any accounts owned by Orion Group Chairman Obaidul Karim and its Managing Director Salman Obaidul Karim.

4h ago