রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি চুরি!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ও টেন্ডারের শর্ত ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুকুর খননের মাটি ‘চুরি করে’ বাইরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ইজারাদারের বিরুদ্ধে।
ট্রাক্টরে করে খনন করা মাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ও টেন্ডারের শর্ত ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুকুর খননের মাটি ‘চুরি করে’ বাইরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ইজারাদারের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মার্চে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্বপাশের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে একটি পুকুর খননের টেন্ডার হয়। কিন্তু, টেন্ডারের শর্তে বলা হয়েছিল- পুকুরের পাড় বাঁধাইয়ের পর অতিরিক্ত মাটি সর্বোচ্চ তিনশ গজ দূরে ফেলে রাখতে হবে। এছাড়া, এ মাটি কৃষি প্রকল্পের আওতায় থাকবে বলেও শর্ত দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু, টেন্ডারের শর্তভঙ্গ করে গত ২৭ মার্চ থেকে খনন করা মাটি ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে বিক্রির অভিযোগ ওঠে এই প্রকল্পের ইজারাদার মাসুদ রানার বিরুদ্ধে।

বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইজারাদার মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের মাটি ক্যাম্পাসেই রাখা হচ্ছে, কোনো মাটি বাইরে নেওয়া হচ্ছে না।’

কিন্তু, মাটি ক্যাম্পাসের বাইরে নেওয়ার প্রমাণ আছে- এমন কথার প্রেক্ষিতে মাসুদ রানা আবার বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা কিছু মাটি বাইরে নিয়েছি। আর সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে। মৌখিকভাবে অনুমতি নেওয়া আছে।’

ওই অভিযোগের পরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১৭টি ট্রাক্টরে খনন করা মাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক ডেইলি স্টারের সংবাদদাতাকে জানান, প্রতিদিন প্রায় দুইশ ট্রাক্টর মাটি ক্যাম্পাসের বাইরে নেওয়া হয়। এই মাটি পার্শ্ববর্তী ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেহেতু তারা শর্ত ভঙ্গ করেছে, তাই আমরা মৌখিকভাবে ও দু’বার চিঠি দিয়ে খননকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তবে, সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা খনন কাজ ও মাটি স্থানান্তর অব্যাহত রেখেছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সুপারিশ করেছিলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উপাচার্যের উপস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে ইজারাদারদের একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে তারা কথা দিয়েছে- তারা আর মাটি নেবে না। এর বেশি আমি বলতে চাই না।’

আগে কেন মিটিং করা হয়নি বা তারা যে শর্ত ভেঙে মাটি বিক্রি করল সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিষয়টি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এভাবে পুকুরের মাটি চুরির বিষয়টি প্রশাসনের ব্যর্থতা উল্লেখ করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, ‘প্রশাসন এই প্রক্রিয়া বন্ধে বা ওই ইজারাদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা নিশ্চিতভাবে দুর্নীতি ও হরিলুটকে সমর্থনের শামিল।’

প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল পুকুরের মাটি চুরি বন্ধে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু আমি মনে করি, প্রশাসন তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যা প্রশাসনের উদাসীনতা এবং একটি বড় দুর্বলতার প্রমাণ।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago