চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৃষ্টির অভাবে ঝরে পড়ছে আম, উদ্বিগ্ন চাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনাবৃষ্টির কারণে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। ফলে জেলার আম চাষিরা এবারের ফলন নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন। তীর্থের কাকের মতো বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা করছেন চাষিরা।
বৃষ্টির অভাবে ঝড়ে পড়ছে আম। ছবি: স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনাবৃষ্টির কারণে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। ফলে জেলার আম চাষিরা এবারের ফলন নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন। তীর্থের কাকের মতো বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা করছেন চাষিরা।

অনাবৃষ্টিতে বেশিরভাগ গাছের আম শুকিয়ে যাচ্ছে। ছবি: স্টার

জেলায় সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছিল গত বছর ৯ অক্টোবর ৯৯ মি.মি.। এরপর জেলায় আর কোনো বৃষ্টি হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মিস্ত্রীপাড়ার আম চাষি সাদেকুল ইসলামের বাগান আছে জেলার সদর উপজেলার চকআলমপুর গ্রামে। তিনি ১৪ বিঘার একটি আমবাগান লিজ নেন, সেখানে ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাত, ফজলিসহ প্রায় ১০০ গাছ আছে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এবার মুকুল এসেছিল প্রায় ৯৫ ভাগ। আমও হয়েছিল ভালো। কিন্তু, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আম ঝরে পড়ছে। এছাড়া আমের আকৃতি এখনো ছোট আছে। অথচ এ সময় আরেকটু বড় হওয়ার কথা ছিল।’

তিনি জানান, কোনো উপায় না থাকায় আমি আম রক্ষায় বাধ্য হয়ে গাছের গোঁড়ায় সেচ দিচ্ছি। প্রতিদিন প্রচুর আম পড়ছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর মহল্লা আমিনুল ইসলাম ১৮ লাখ টাকায় একটি ৪০ বিঘার বাগান লিজ নিয়েছেন নাচোল উপজেলার জোনাকীপাড়া গ্রামে।

তিনি বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে আম ঝরে যাচ্ছে। আমি খুবই উদ্বিগ্ন, এই অবস্থা কিছুদিন চলতে থাকলে আমার মূল টাকা উঠবে না। আমি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হব।’

তিনি জানান, বৃষ্টির অভাবে আমের বোটা শুকিয়ে আম ঝরে পড়ছে। কোনোভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না।

এবার মুকুল এসেছিল প্রায় ৯৫ ভাগ গাছে। ছবি: স্টার

তাদের মতো একই অবস্থা শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর গ্রামের আমবাগান মালিক হাসান আল সাদী ও সদর উপজেলার ধুমি হায়াতপুর গ্রামের বাগান মালিক মোহাম্মদ হাসানের।

তারাও জানান, মৌসুমের শুরুতে ভালো মুকুল হয়েছিল এবং আমও ধরেছিল ভাল। অনাবৃষ্টির কারণে আমের আকারের বৃদ্ধি হয়েছে কম এবং বোটা শুকিয়ে আম ঝরে পড়ছে। আম ঝরে পড়ার কারণে এবার উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিবে।

আমবাগান মালিকরা জানান, আমের বোটা শক্ত ও আমের আকৃতি বড় হওয়ার জন্য মার্চ মাসের শুরু থেকেই বৃষ্টি দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্য গত কয়েক মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় ছোট ছোট আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদক শহরের সরকারপাড়া, গনকা ও সদর উপজেলার ধুমি হায়াতপুর, চক আলমপুর ঘুরে দেখেছে, আমবাগানে প্রচুর আম ঝরে পড়ছে।

আমের আকৃতি এখনো ছোট আছে। ছবি: স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত বছর জেলায় জানুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১,৩৮০ মি.মি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে ১৭ মি.মি. ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ মি.মি. মার্চ মাসে ২০ মি.মি. ও এপ্রিল মাসে ৭২ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছিল। অথচ এ বছর এখনো বৃষ্টির দেখা নেই।’

তিনি জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে সাধারণত ১০ থেকে ১২ ভাগ আম ঝরে পড়ে। কিন্তু, এবার বৃষ্টির অভাবের বেশি আম ঝরে পড়ছে। তিনি আম চাষিদের গাছের গোঁড়ায় সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪ হাজার ৮৭১ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এ মৌসুমে ৯৫ শতাংশ গাছ মুকুলিত হয়। গত বছর ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে জেলায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছিল। আমের অবস্থা সন্তোষজনক না হলেও লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদন হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago