দিল্লিতে অক্সিজেনের তীব্র সংকটে রোগীদের পাশে গুরুদুয়ারা
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানী নয়া দিল্লির হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকটের কারণে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নাভিশ্বাস উঠছে।
সংকটের সময়ে রোগীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গাজিয়াবাদ শহরের শিখদের মন্দির গুরুদুয়ারা। শিখ এইড গ্রুপ ‘খালসা হেল্প ইন্টারন্যাশনাল’ এর কর্মকর্তারা জানান, অল্প অল্প অক্সিজেন কিনে যাদের জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেনের প্রয়োজন তাদের দেওয়া হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদ শহরের গুরুদুয়ারার সামনে রাস্তার দৃশ্য দেখলে শিউরে উঠতে হয়।
শনিবার মন্দিরের বাইরে রাস্তায় গাড়ি, ভ্যান ও রিকশায় থাকা কোভিড -১৯ রোগী ও পরিবারের সদস্যদের ভিড় দেখা যায়। কালো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোগীদের সাহায্যের জন্য ছুটে চলেছেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জায়গা না থাকায় ৭০ বছর বয়সী বিদ্যা দেবীকে কোথাও ভর্তি করানো যায়নি। করোনা আক্রান্ত মা’কে নিয়ে গুরুদুয়ারায় ছুটে আসেন মনোজ কুমার।
মন্দিরের বাইরে একটি গাড়ির পিছনের সিটে তাকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। রাস্তায় বসানো এক অক্সিজেন ট্যাঙ্কের সাহায্যে শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি। মাস্ক পরা এক সেচ্ছাসেবক শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
মনোজ কুমার বলেন, ‘আমি অন্য কোথাও সাহায্য না পেয়ে এখানে এসেছি। আমি গুরুদুয়ারায় ফোন করেছিলাম। তারা দ্রুত মাকে নিয়ে এখানে চলে আসতে বলেছে।’
গুরুদুয়ারার বাইরের রাস্তাটি যেন হাসপাতালের কোনো জরুরি ওয়ার্ড। হাসপাতালের শয্যার জায়গায় এখানে আছে সারি সারি গাড়ি। হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড় ও অক্সিজেন সংকটের মধ্যে রোগীরা শ্বাস নিতে এখানে ছুটে আসছেন।
রয়টার্সের সংবাদদাতা সেখানে ভ্যানে চড়ে এক মধ্যবয়সী নারীকে আসতে দেখেন। তিনি অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। তার ছেলে অনবরত মাকে ডেকে তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন।
আরেকটি ভ্যানে এক মধ্যবয়সী পুরুষকে গাড়ির সিটে অজ্ঞান হয়ে পড়তে থাকতে দেখা যায়। তার পা গাড়ির দরজার বাইরে চলে গিয়েছিল। তার জ্ঞান ফেরানোর জন্য একজন স্বেচ্ছাসেবী পা ঘষতে থাকেন, আরেকজন বুকে পাম্প করেন।
গুরুদুয়ারার সভাপতি ও খালসা হেল্প ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা রুমি জানান, নয়াদিল্লিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তিন দিন আগে তিনি এই সেবা কার্যক্রম শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ রাস্তায় মারা যাচ্ছে। সে কারণেই আমরা এটা শুরু করেছি।’
রুমির অনুমান অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খালসা হেল্প ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ প্রায় ৭০০ রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়েছে। অনেককেই বাঁচানো যায়নি।
শনিবার সন্ধ্যায় গুরুদুয়ারার সামনের রাস্তায় গাড়ির জ্যাম লেগে যায়। স্বেচ্ছাসেবকরা গাড়িগুলোকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘দয়া করে রাস্তার মাঝখান থেকে গাড়িগুলো সরান। এক লাইনে গাড়ি রাখুন। আপনারা সবাই অক্সিজেন পাবেন।’
Comments