লকডাউনে জীবিকা সংকটে ফেরিওয়ালারা
লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা চুড়িপট্টি গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা বেগম (৩৪)। চুড়ি, ফিতা, স্নো, পাউডার ফেরি করে বিক্রি করেই চলে তার সংসার।
তার স্বামী রজব আলীও ফেরিওয়ালা। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে দুজনে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ টাকা আয় করতেন।
কিন্তু, লকডাউনে তাদের বিক্রি নেই। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেও দিনে ২০০ টাকা রোজগার করতে পারছেন না।
তাদের বিক্রি হয় মূলত রেল স্টেশন, বাস টার্মিনালের মতো জায়গায়। এসব জায়গা এখন জনশূন্য। গ্রামে গ্রামে ঘুরে যা বিক্রি হয় সেটাই এখন ভরসা তাদের।
আকলিমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সারাদিনে ৩০০ টাকা বিক্রি করেছি। এর থেকে আয় হবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কীভাবে সংসার চালাব? পুঁজি ভেঙে চলতে হচ্ছে, মহাজনের কাছে দেনা বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন আমাদের আরও গরিব করে দিলো। আমরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছি।’
রজব আলী বলেন, ‘রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনালে বেশি বিক্রি হতো। লকডাউনে বাস-ট্রেন বন্ধ, আমার ব্যবসাও বন্ধ। তারপরও বের হয়ে সারাদিন ঘুরে ১০০ টাকা, খুব বেশি হলে ১৫০ টাকা আয় করি। এই টাকায় সংসার চলে না। ঋণ বাড়ছে।’
আকলিমার প্রতিবেশী মেহেরুন বেগম (৪০) বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে ফেরি করে তেমন ক্রেতা পাওয়া যায় না। সংসার চালাতে মহাজনদের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। লকডাউনে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোশালা বাজার এলাকার ফেরিওয়ালা নুর ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘ট্রেনে পণ্য বিক্রি করতাম। প্রতিদিন আয় হতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখন ট্রেন বন্ধ, তাই রোজগার নেই। পুঁজি ভেঙে ঘর চালাই। এভাবে আর কতদিন চলবে কে জানে। ট্রেন না চললে আমার আয় রোজগারের আর কোনো পথ নেই।’
লালমনিরহাট জেলা হকার্স সমিতির সভাপতি নবির হোসেন দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, ‘লালমনিরহাটে প্রায় দুই হাজার ৬০০ জন ফেরিওয়ালা আছে। কুড়িগ্রামে আছে প্রায় তিন হাজার ৩০০। লকডাউনের কারণে তাদের পরিবার খুবই কষ্টে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বিক্রি নেই। অনেকের ঠিকমতো দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থাও হচ্ছে না। মহাজনদের কাছে ঋণের যে বোঝা বাড়ছে তা কীভাবে শোধ করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই।’
যোগাযোগ করা হলে লালমনিরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকার ঘোষিত সহায়তা আমাদের কাছে এখনো পৌঁছেনি। ব্যক্তিগতভাবে যতটা পারছি বিভিন্নজনকে সহযোগিতা করছি।’
Comments