মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের প্রশিক্ষণ

মিয়ানমারের সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অন্তত ১২০ তরুণ সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সম্প্রতি নিজেদেরকে ‘সেনাবিরোধী নতুন শক্তি’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া একটি দলের প্রকাশিত ভিডিও থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের প্রশিক্ষণে তরুণরা। ভিডিও থেকে নেওয়া/রয়টার্স

মিয়ানমারের সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অন্তত ১২০ তরুণ সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সম্প্রতি নিজেদেরকে ‘সেনাবিরোধী নতুন শক্তি’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া একটি দলের প্রকাশিত ভিডিও থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভিডিওতে তারা মিয়ানমারের ভাষায় ‘জনগণের জন্যে লড়াই’য়ে তাদের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। সেখানে আরও দেখা যায়, ভোরের আলোয় তরুণরা একটি বনাঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিওটি প্রকাশ করা মিয়ানমারের ওই সংগঠনটি নিজেদেরকে চলমান সেনা শাসনবিরোধী নতুন শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মন মন বার্তা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, তাদের ইউনাইটেড ডিফেন্স ফোর্স গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানবিরোধীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।

‘বিক্ষোভকারীদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ঘটনা এই প্রথম দেখা গেল’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার এ দৃশ্য দেশটিকে আরও গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মন মন রয়টার্সকে আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ১০ দিন থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আমাদের সবার লক্ষ্য একটিই। তা হলো— বিপ্লব।’

‘প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অধিকাংশের বয়স ২০ এর কোঠায়। তারা শিক্ষার্থী। কয়েকজন আছেন যাদের বয়স ৩৫ বছর, কারো বয়স ৪০ বছর…’ যোগ করেন তিনি।

রয়টার্স এই সংগঠনটি সম্পর্কে তথ্যগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এর আগে তারা বিক্ষোভরত গণতন্ত্রকামীদের ‘দাঙ্গাবাজ’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি বলে মন্তব্য করেছিল।

মন মন আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে ২৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২০ জন নারী। মিয়ানমারজুড়ে তাদের সদস্য সংখ্যা এক হাজারের মতো বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তাদেরকে বিদ্রোহী সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) অধীনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে কেএনইউ’র পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান পাদোহ সো তাও নে রয়টার্স’কে জানিয়েছেন, তিনি প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে নিশ্চিতও করবেন না, আবার অস্বীকারও করবেন না।

জনগণের জন্যে লড়াই

সেনাবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া প্রথম সারির কয়েকজন বিক্ষোভকারী এখন সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে বার্তা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন মন মন।

তার সংগঠনের ভিডিওতে দেখা গেছে, কালো পোশাকে প্রশিক্ষণার্থীরা শরীরচর্চা ও ক্লাসরুমে অধ্যয়ন করছেন।

এতে আরও দেখা যায়, ক্লাসরুমে প্রশিক্ষণার্থীদের একজন প্রশ্ন করছেন, ‘তোমরা কী করছ?’ প্রশিক্ষণার্থীরা তখন সমস্বরে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।’ এরপর প্রশ্ন করা হয়, ‘কেন প্রশিক্ষণ নিচ্ছ?’ এর উত্তরে বলা হয়, ‘লড়াই করতে’ এবং ‘কাদের জন্যে লড়াই?’— এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, ‘জনগণের জন্যে’।

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে তার বড় ছেলেও রয়েছেন উল্লেখ করে মন মন জানিয়েছেন, এখানে ১০ দিনে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণে শেখানো হয় কীভাবে একত্রিত হতে হবে এবং কীভাবে ছড়িয়ে পড়তে হবে। এ ছাড়াও, তাদেরকে দিয়ে তিনটি গুলি ছোড়ানো হবে।

তিনি বলেন, ‘দেড় মাসের প্রশিক্ষণে থাকছে বিস্ফোরক ও গুলি চালানোর শিক্ষা।’

‘আমরা কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি না। আমাদের লড়াই প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে,’ যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে গণতন্ত্রকামীদের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

আরও পড়ুন:

এবার মিয়ানমারে ‘গেরিলা’ আক্রমণের ডাক

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে ১০ সশস্ত্র সংগঠনের সমর্থন

মিয়ানমার: ১৯৪৮ থেকে ২০২১

মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগ আহ্বান

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলিতে নিহত আরও ৯০

চীন-রাশিয়ার বিরোধিতায় আবারও মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতি দিতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি আটকে দিলো চীন

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদকে

সু চি ‘সুস্থ’ আছেন: আইনজীবী

বিক্ষোভ করলে মাথায় গুলি লাগতে পারে: মিয়ানমার সেনাদের হুমকি

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে নিহত ৩ শতাধিক

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলিতে নিহত আরও ৯০

সু চির বিরুদ্ধে মিয়ানমার পুলিশের মামলা

মিয়ানমারে আমাদের বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে না: জাপান

মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগে বিলম্ব ঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ ঝুঁকিতে মিয়ানমার

‘সু চি সরকারের বেশিরভাগ ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর হাতেই ছিল’

রোহিঙ্গা প্রতিক্রিয়া: সু চি-সেনাবাহিনী একই

অভ্যুত্থান মেনে না নেওয়ার আহ্বান সু চির

যে কারণে সু চিকে সরিয়ে ক্ষমতা নিলো সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দায় বিশ্ব সম্প্রদায়

‘নির্বাচনে কারচুপি’র অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান

মিয়ানমারে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র চায় বাংলাদেশ

Comments

The Daily Star  | English

Banks mostly gave loans to their owners rather than creditworthy borrowers

Bangladesh’s banking sector was not well-managed in recent years. Banks mostly gave loans to their owners, rather than to creditworthy entities. Consequently, several banks are now in difficulty.

10h ago