গাজীপুরে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষে সাফল্য

2.jpg
শ্রীপুরের মধ্য টেপিরবাড়ী গ্রামের আব্দুল হামিদ বাণিজ্যিকভাবে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। ছবি: স্টার

গাজীপুরের শ্রীপুরে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেকে। বেশি স্বাদ, বেশি লাভ, সাথী ফসল ও অসময়ে ফলনের কারণে কৃষকদের মধ্যে এ তরমুজ চাষের বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

উপজেলার মধ্য টেপিরবাড়ী গ্রামের আব্দুল হামিদ গত বছর পরীক্ষামূলক সফলতার পর এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিন তার আবাদি জমি থেকে ভোক্তারা প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। একেকটি তরমুজের ওজন অন্তত ৮০০ গ্রাম।

আব্দুল হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছর তিনি প্রথম গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করেন। ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি এ জাতের ফল চাষে আগ্রহী হন। পরে স্থানীয় কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাষের নিয়ম কানুন জেনে নেন।

এ বছর ৩৫ শতক লিচু বাগানে তিনি গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করেছেন বলে জানান। একদিকে লিচুর ফলন, অন্যদিকে তরমুজের আবাদ তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।

তিনি জানান, অনলাইনে অর্ডার করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। পরে মাচা তৈরি, বেড স্থাপন ও ফুল থেকে তরমুজ বের হওয়ার পর জালের ব্যাগ বেঁধে দেন। তিন মাসের মধ্যেই তিনি ফলন পেতে শুরু করেন। ৩৫ শতক জমিতে তরমুজ চাষে তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়।

1.jpg
গাছ থেকে তরমুজ সংগৃহ করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে প্রতিবেশীরা ছাড়াও দূরের কৃষকেরা পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা নিতে আসছেন বলেও জানালেন।

গতকাল মঙ্গলবার তার জমি থেকে তরমুজ নিতে আসা রাশেদ আহমেদ জানান, এক বন্ধুর কাছ থেকে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ খেয়ে বুঝেছেন যে, এর স্বাদ সাধারণ তরমুজের চেয়ে ভিন্ন। পরে তিনি নিজেই ১০ কেজি কিনেছেন।

অপর এক ক্রেতা সাইফুল আলম সুমন বলেন, ‘অনেকের কাছেই গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের স্বাদের কথা শুনেছি। তাই নিজে এবার ১৪ কেজি কিনেছি।’

আব্দুল হামিদের প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন শেখ আগামী মৌসুমে এ নতুন জাতের তরমুজ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রীপুরের উঁচু জমির মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের। সাধারণত লিচু ও কাঁঠালের ফলন এখানে ভালো হয়। এখানে ভিন্ন জাতের তরমুজের আশানুরূপ ফলন হবে, এটা অবিশ্বাস্য ছিল। কৃষক আব্দুল হামিদ তা বিশ্বাসযোগ্য করে দেখিয়েছেন। আমরাও উৎসাহিত হয়েছি। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আগামী বছর আমরাও এ তরমুজ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

3.jpg
বাগান থেকেই তরমুজ বিক্রি করছেন আব্দুল হামিদ। ছবি: স্টার

আরেক প্রতিবেশী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লিচু বাগানে তরমুজ চাষ করে সাথী ফসলের প্রমাণ করেছেন কৃষক হামিদ। ভবিষ্যতে এলাকার অন্যান্য চাষিরাও ভিন্ন জাতের এ তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

যোগাযোগ করা হলে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুয়ীদ উল হাসান বলেন, ‘গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের গায়ে হলুদ কিন্তু ভেতরে লাল। গত বছর আশপাশের কৃষক ও এলাকাবাসীর চাহিদার কারণে এবারও আরেকটু বেশি পরিমাণে আবাদ করা হয়েছে। এটি আমাদের দেশে নতুন। স্বাভাবিক মৌসুমে উৎপাদনের পাশাপাশি অফ সিজনেও এটা চাষ করা যায়। তখন এর দাম বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

‘যারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটি চাষ করতে চান, তাদের জন্য কৃষি বিভাগ সব ধরণের সহায়তা করবে। আশা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে শ্রীপুরে এর চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

NCC ex-mayor Selina Hayat Ivy arrested

She was arrested around 5:45am today following a night-long raid at her Deobhog residence

1h ago