পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল ম্যান সিটি

দুর্দান্ত ছন্দে শুরু করা পিএসজি এগিয়ে গেল শুরুতে। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল ম্যানচেস্টার সিটি। স্বাগতিক গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের অসাবধানতায় তারা পেল সমতাসূচক গোল। অল্প সময়ের ব্যবধানে ফের জালের ঠিকানা খুঁজে পেল তারা। প্রতিপক্ষের মাঠে দারুণ জয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
বুধবার রাতে পার্ক দে প্রিন্সেসে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ২-১ গোলে পিএসজিকে হারিয়েছে ম্যান সিটি। মার্কুইনহোসের লক্ষ্যভেদে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন কেভিন ডি ব্রুইন। জয়সূচক গোলটি আসে রিয়াদ মাহরেজের ফ্রি-কিক থেকে।
প্রথমার্ধে দাপট ছিল পিএসজির। আক্রমণাত্মক ফুটবলে তারা ব্যতিব্যস্ত রাখে সিটির রক্ষণভাগকে। পাশাপাশি বল হারালে দ্রুত তা দখলে নেওয়ার তাড়া দেখায় দলটি। ফলে সিটিজেনদের পক্ষে গুছিয়ে খেলা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে যায় খেলার চিত্র। উজ্জীবিত প্রতিপক্ষের সামনে রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নিয়ে উল্টো ছন্দ হারিয়ে ফেলে পিএসজি। তারা পুরো ১১ জন নিয়েও খেলা শেষ করতে পারেনি। বিপজ্জনক ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ইদ্রিসা গেয়ে।
গোটা ম্যাচে বরাবরের মতো বল দখলে এগিয়ে ছিল সিটি। তারা আক্রমণেও প্রাধান্য দেখায়। গোলমুখে তাদের নেওয়া ১১ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে, মরিসিও পোচেত্তিনোর দলের ১০ শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে। এর মধ্যে বিরতির আগেই তারা নিয়েছিল নয়টি শট।

দ্বিতীয় মিনিটেই সিটির রক্ষণভাগের পরীক্ষা নেয় স্বাগতিকরা। পাল্টা আক্রমণে ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপের কাছ থেকে বল পেয়ে যান নেইমার। তার শট কাইল ওয়াকার ব্লক করার পর তা সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক এদারসন। দশ মিনিট পর তার দুর্দান্ত সেভে বেঁচে যায় সিটি। মার্কো ভেরাত্তির সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে জোরালো শট নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার। বলে হাত ছুঁইয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন এদারসন।
দুই মিনিট পর কর্নার থেকে এগিয়ে যায় প্যারিসিয়ানরা। আনহেল দি মারিয়ার হাওয়ায় ভাসানো বলে নিখুঁত হেড করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কুইনোস। বল যখন জালে ঢোকে, তখন এদারসনের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।
২১তম মিনিটে ম্যাচে নিজেদের প্রথম সুযোগটি তৈরি করে সফরকারীরা। জোয়াও ক্যানসেলোর ক্রসে বাইলাইনের কাছ থেকে দারুণ দক্ষতায় কোণাকুণি শট নেন বার্নার্দো সিলভা। তবে তৈরি ছিলেন নাভাস। তাই কোনো বিপদ ঘটেনি। ৪২তম মিনিটে ফিল ফোডেন নাভাস বরাবর শট নিয়ে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন।

৬১তম মিনিটে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ডি ব্রুইনের বাইসাইকেল কিক লক্ষ্যে থাকেনি। তিন মিনিট পর গোল শোধ করেন তিনিই। তার ক্রস লুফে নেবেন কিনা তা নিয়ে দোটানায় ছিলেন নাভাস। এই ভুলই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য।
সাত মিনিট পর সিটির এগিয়ে যাওয়ার দায়ও পিএসজির রক্ষণভাগের। ফ্রি-কিক আটকাতে যে দেয়াল বানানো হয়েছিল তা কাজে আসেনি। প্রেসনেল কিম্পেম্বে ও লেয়ান্দ্রো পারদেসের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে হয় গোল। শুরুতে ডি ব্রুইন কিক নেবেন বলে মনে হলেও, শেষ মুহূর্তে শট নিয়ে বাজিমাত করেন আলজেরিয়ান ফরোয়ার্ড মাহরেজ।
৭৫তম মিনিটে ফোডেনের হেড পরাস্ত করতে পারেনি নাভাসকে। দুই মিনিট পর ইলকাই গুন্দোয়ানকে ফাউল করে মাঠ ছাড়েন গেয়ে। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এক জন কম নিয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি পিএসজির। উল্টো তাদের আরও চেপে ধরে সিটি।
৮৪তম মিনিটে মাহরেজের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর আবার হতাশায় পুড়তে হয় তরুণ ইংলিশ তারকা ফোডেনকে। পিএসজির তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে জায়গা বানিয়ে তার নেওয়া শট পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি নাভাসকে।
আগামী মঙ্গলবার রাতে সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হবে দুদল। পিছিয়ে থাকার ধাক্কা সামলে ফাইনালে উঠতে হলে সেদিন অসাধারণ কিছু করে দেখাতে হবে নেইমার-এমবাপেদের।
Comments