মহামারি নিয়ন্ত্রণ: বড় শহরগুলো আলাদা করার পরিকল্পনা করছে সরকার

কোভিড-১৯ সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করে দেশের বড় শহরগুলোকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে কঠোর নজরদারিতে রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার।
করোনাভাইরাস
ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করে দেশের বড় শহরগুলোকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে কঠোর নজরদারিতে রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার।

গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দেশব্যাপী চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

‘বড় শহরগুলোতে সংক্রমণের হার বেশি হওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এগুলোকে আলাদা করে দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মেয়ররা তাতে রাজি হয়েছেন। এই শহরগুলোতে কোনো যানবাহন প্রবেশ বা ছেড়ে যেতে দেওয়া হবে না। তবে, শহরগুলোর অভ্যন্তরে যানবাহন চলবে’, সভায় যোগ দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সরকার শহরের অভ্যন্তরে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেবে। তবে, আন্তজেলা পরিবহনসেবা শিগগিরই চালু হবে না।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়া।

এটিও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যেসব শপিংমলগুলো স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা মেনে চলছে না, তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিযুক্ত থাকবে।

খুরশীদ আলম বলেন, ‘যেসব লোক মাস্ক ছাড়াই বাইরে যাবেন, তাদের দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় জেল বা জরিমানা করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে।’

বিজ্ঞপ্তিতে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অন্যান্য নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় চলমান বিধিনিষেধ কার্যকর হয়নি বলে প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেন।

বিষয়গুলো হলো— জেলাভিত্তিক লকডাউন, যারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা মেনে চলছে না, সেই দোকান ও মলগুলো বন্ধ করা এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইন ২০১৮’র সংশোধন করা।

খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন অঞ্চলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। আমরা এই শহরগুলোতে কঠোর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছি। অন্যথায়, আবার সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

‘আসন্ন বিধিনিষেধগুলো বর্তমানের মতো হবে না ... আমরা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করার পরবর্তী উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, আজকে আমরা একটি চূড়ান্ত ঘোষণা পাব’, খুরশীদ আলম আরও বলেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৈঠকে আলোচিত সুপারিশ নিয়ে আজকে মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

ঈদ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিসের চলমান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো, ছুটির চলাকালীন সময়ে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা; পর্যায়ক্রমে পোশাকশ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানো; ঈদের পরে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্যে দোকান ও মল বন্ধ রাখাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানান তারা।

এদিকে, গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আরেকটি ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতর্কতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, কোভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউয়ের মতো মানুষজন যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনাগুলোর বিষয়ে উদাসীন থাকে, তবে দেশে খুব শিগগিরই তৃতীয় ঢেউ দেখা দিতে পারে।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার কারণে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা পর্যায়ক্রমে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তবে, ২৫ এপ্রিল থেকে বাজার ও শপিংমলগুলো পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে কোভিডের সংক্রমণ কমলেও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক করেছে যে, শপিংমলগুলো পুনরায় চালু করা ও মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনীহায় সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে জনগণের চলাচল বাড়ার কারণে ভাইরাস সংক্রমণে ঝুঁকি সম্প্রতি বেড়েছে।

পরিবহন শ্রমিকরা গণপরিবহন পুনরায় চালু করার দাবিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন।

সর্বশেষ আজ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ঈদকে সামনে রেখে জনস্বার্থ বিবেচনায় আগামী ৬ মে থেকে শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর বিষয়ে সরকার সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে, দূরপাল্লার বাস আগের মতোই বন্ধ থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শপিংমলগুলোতে ব্যাপক সমাবেশ ও ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ লোকজনের এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়া ভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সংস্থাগুলো জানায়, সাধারণ সময় ঈদের আগে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর ছেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, প্রতিবার বাড়ি যাওয়ার হিড়িকের পর কোভিডের সংক্রমণ বেড়েছে।

এর আগে বুধবার কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি স্বাস্থ্যবিধি মানা কার্যকর করতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

আরও পড়ুন:

করোনা রোগী প্রতি সরকারের ব্যয় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, বেসরকারিতে দ্বিগুণ

মে’র শেষে দ্বিগুণ হতে পারে দৈনিক সংক্রমণ

Comments

The Daily Star  | English

Heat stress jeopardises dairy industry

There are around 2.5 crore cows and 13 lakh to 14 lakh farmers in the country. Of the farmers, 3.5 lakh own large farms, according to the Dairy Farm Owners Association in Bangladesh.

1h ago