বাংলা চলচ্চিত্রের ‘অ্যাকশন কিং’ রুবেল

‘লড়াকু’ সিনেমা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র নতুন বাঁক নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই সিনেমার আগেও অন্য সিনেমাতে অ্যাকশন দৃশ্য থাকলেও কুংফু, ক্যারাতে মার্শাল আর্টের অ্যকশন জনপ্রিয় হয় ‘লড়াকু’ দিয়েই। এই সিনেমার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় নায়ক রুবেলের। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন।
মাসুম পারভেজ রুবেল। ছবি: সংগৃহীত

‘লড়াকু’ সিনেমা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র নতুন বাঁক নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই সিনেমার আগেও অন্য সিনেমাতে অ্যাকশন দৃশ্য থাকলেও কুংফু, ক্যারাতে মার্শাল আর্টের অ্যকশন জনপ্রিয় হয় ‘লড়াকু’ দিয়েই। এই সিনেমার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় নায়ক রুবেলের। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন।

হুমায়ুন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামানদের সঙ্গে রুবেল। ছবি: সংগৃহীত

‘লড়াকু’ সিনেমা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে রুবেল বলেন, ‘এই সিনেমা সবসময়ের জন্য প্রিয়, ভালোলাগার। সবাই  আমাকে চিনেছে এই  লড়াকু সিনেমার মাধ্যমে। এটা প্রযোজনা করেছিলেন আমার ভাইয়া সোহেল রানা। বাংলাদেশের মার্শাল আর্ট ঘারানার  আধিপত্য শুরু এই সিনেমার মাধ্যমে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লড়াকু সিনেমার একটি দৃশ্য আছে যা আমার অসম্ভব প্রিয়। এই দৃশ্য কক্সবাজার সমুদ্রের মাঝখানে ধারণ করা হয়েছিল, দুইটা ট্রলারে দু’পা দিয়ে একটা অ্যকশন দৃশ্য ছিল। পা একটু এদিক ওদিক হলেও ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো আমার শরীর। রিস্ক নিয়ে এমন দৃশ্যের শুটিং করেছিলাম। দর্শক খুব পছন্দ করেছিল এই অ্যাকশন দৃশ্য। চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই সেই সোনালী দিনগুলো।’

‘বুকে আছে মন, মনে আছে আশা, আশা থেকে হয় বুঝি ভালোবাসা… আমার অভিনীত লড়াকু সিনেমার গান। মনে হয় গানটা গতকাল রেকর্ডিং হয়েছে। আজও নতুনের মতো লাগে।  আলম খানের সুরে গানটি গেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর ও রুনা লায়লা। এই গান আমার সবসময়ের জন্য প্রিয় তালিকায় আছে,’ বলেন রুবেল।

একসময় মার্শাল আর্ট ঘারানার সিনেমা মানেই রুবেলের নাম উচ্চারিত হতো।

ঢাকাইয়া বাংলা সিনেমার ‘ব্রুসলি’ বলা হতো তাকে। আশি ও নব্বয়ের দশক ঢাকাই সিনেমায় মার্শাল আর্টে মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি। মার্শাল আর্ট তখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। অনেকে কিশোর, তরুণ তখন মার্শাল আর্টের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। ‘লড়াকু’ সিনেমার পরপরই রুবেল অভিনীত ‘উদ্ধার’, ‘বীরপুরুষ’, ‘বজ্রমুষ্ঠি’, ‘হুংকার’, ‘বীরবিক্রম’, ‘আমিই শাহেনশাহ’, ‘বিষদাঁত’, ‘বজ্রপাত’, ‘ইনকিলাব’ প্রতিটা সিনেমায় সুপারহিট হয়েছিল।

‘অ্যাকশন কিং’ খ্যাত নায়ক রুবেলে  অভিনীত প্রতিটা সিনেমা দর্শক পছন্দ করত। তার অন্যতম কারণ তিনি খালি হাতে অ্যকশন দৃশ্যে অংশ নিতেন। পিস্তল কিংবা ভারি কোনো অস্ত্র ব্যবহার করতেন না। দর্শকের কাছে তাই আলাদা একটা চাহিদা ছিল এই নায়কের।

রুবেল অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘হুংকার’, ‘বিষদাঁত’, ‘বজ্রপাত’ ‘অকর্মা’ ‘ইনকিলাব’  ‘উত্থান পতন’ ‘সন্ত্রাস’ ‘শেষ আঘাত,’ ‘দেশ দুশমন’, ‘অর্জন’, ‘লাওয়ারিশ’, ‘অধিনায়ক’, ‘বীরযোদ্ধা’, ‘অন্যায় অত্যাচার’, ‘মহাগুরু’, ‘মিন্টু সম্রাট’, ‘লড়াই’, ‘সম্পর্ক  মহাশত্রু’, ‘মৃত্যুদণ্ড’, ‘মায়ের কান্না’, ‘টপ রংবাজ’, ‘চোখের পানি’, ‘জ্বলন্ত আগুন’, ‘বীরযোদ্ধা’, ‘সম্পর্ক’, ‘অপহরণ’, ‘ঘরের শত্রু’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘মীরজাফর’, ‘জ্বলন্ত বারুদ’, ‘ক্ষমা নেই’, ‘রাগী’ ইত্যাদি।

রুবেল প্রায় দুইশ’র বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৭টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন। এছাড়া ‘দ্যা একশন ও্যারিয়রস’ নামে নিজস্ব ফাইটিং গ্রুপ আছে তার। যারা অনেক সিনেমার অ্যকশন দৃশ্য পরিচালনা করেছেন।

রুবেল-হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় ‘সন্ত্রাস’ সিনেমায় প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন তারা। এরপর প্রায় পঞ্চাশটি সিনেমায় তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে। ‘বিশ্ব প্রেমিক’ ছিল তাদের ভিন্ন মাত্রার সিনেমা।

নায়ক রুবেলের পুরোনাম মাসুম পারভেজ। অভিনেতা মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানার ছোট ভাই। তাদের আরেক ভাই কামাল পারভেজ। তিনিও কিছু সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। তিন ভাইকে ‘বীরপুরুষ’ সিনেমায় দেখা গিয়েছিল।

আজ ৩ মে ‘অ্যাকশন কিং’ নায়ক রুবেলের ৫৯ তম জন্মদিন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago