কথা বলা অপরাধ হলে আমাকেও গ্রেপ্তার করুন: ডা. জাফরুল্লাহ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে প্রতিবাদ আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের ঈদের আগেই মুক্তি দাবি করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অভিভাবক ও নাগরিক সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তারা মানুষের অধিকারের কথা বলেছে, যৌক্তিক প্রতিবাদ করেছে। মানুষের অধিকারে কথা বলা যদি অপরাধ হয় আমিও সেই একই অপরাধে অপরাধী। আমাকেও গ্রেপ্তার করুন। জেলে রাখুন। ছাত্ররা যখন মুক্তি পাবে। আমাকেও তখন মুক্তি দেবেন।’
আসন্ন ঈদের আগেই গ্রেপ্তার সব শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ওই ছাত্ররা কি কাউকে খুন করেছে, বলৎকার করেছে, চাঁদাবাজি বা ছিনতাই করেছে?’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আপনার কাছে বিচার চাইতে এসেছি। ঘুম ভাঙ্গার আবেদন করছি। আপনাকে অপমান করার অধিকার আপনার কন্যার নেই। আপনাকে অপমান করার অধিকার নরেন্দ্র মোদির নেই। আপনার সময় যে সমস্ত বিচার হয়েছিল, মানুষ ন্যায্য বিচার পেয়েছিল, আপনার আত্মজীবনীতে এই কথা আছে। কিন্তু আজকে শিক্ষার্থীরা ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘একটা সরকার কত দুর্বল হলে কিছু ছাত্রের ভয়ে কাঁপতে হয়। তাদের গ্রেপ্তার তো করেছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন মতিঝিলে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কীভাবে পুলিশ হামলা করেছে, ছাত্রদের আটক করেছে। গ্রেপ্তার করে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যারা বাইরে আছে তাদের আতঙ্কে রাখা হচ্ছে, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। যেসব পুলিশ ছাত্র নির্যাতনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সরকার তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করছে। আমরা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘ছাত্রদের পরিবারসহ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঈদের আগে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে আমাদের ঈদ হবে গণভবনের সামনে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ৫১ জনের মধ্যে তিন জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কী করছেন? গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচ জন কাশিমপুর কারাগারে বন্ধুদের দেখতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের আটক করা হয়। ছাত্রদের আজকে ভয় দেখানো হচ্ছে। এ দেশের ছাত্রসমাজ এর জবাব দেবে।’
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সুজন’র বদিউল আলম মজুমদার, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য রাখাল রাহা, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নেতা ড. লুৎফুর রহমান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, রুবি আমাতউল্লাসহ গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের আভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিন ইয়ামিন মোল্লার পিতা রফিকুল ইসলাম মোল্লা, হাফেজ আকরাম হোসেনের পিতা হাফেজ আলমগীর হোসেন, আরিফুল ইসলামের বড় ভাই তারেক, রোকেয়া জাবেদ মায়ার ছোট ভাই সোলাইমান, আল আমিন আতিয়ারের স্ত্রী লাকী আতিয়ার, বজলুল কবিরের ভাই শিফাত।
পরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কারাবন্দী ছাত্রদের মুক্তির ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সঙ্গে দেখা করেন। উপাচার্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
Comments