খসড়া শিক্ষা আইন: সব গাইড বই নিষিদ্ধ করা হবে

শিগগির শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ আইনে নোটবই ও গাইড বই ছাপানো, প্রকাশনা ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

শিগগির শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ আইনে নোটবই ও গাইড বই ছাপানো, প্রকাশনা ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, শিক্ষকরা তাদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রাইভেট টিউশনির মাধ্যমে পড়াতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়ার ওপরেও আসছে নিষেধাজ্ঞা।

খসড়ার কাজটি শেষ পর্যায়ে আছে বলে গতকাল রোববার বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটি ভার্চুয়াল সভা শেষে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সভায় অংশ নেন।

সভা শেষে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি শেষ মুহূর্তে খসড়া আইনটির কিছু শব্দ ও বাক্যে সামান্য পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, তাহলে তার জন্য আমরা অল্প সময় নেব।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা খসড়া আইনটির ভাষা ঠিক করার জন্য একে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভাষা বাস্তবায়ন কোষ কমিটির কাছে পাঠাব। একইসঙ্গে খসড়াটি মন্ত্রিসভার একটি কমিটির কাছেও পাঠাব। তারা মন্ত্রিসভায় খসড়া আইন অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের আগে সেটির পর্যালোচনা করেন।’

কর্মকর্তারা জানান, খসড়া আইনে নোট বই ও গাইড বই ছাপানো, প্রকাশ ও বিপণনের জন্য অপরাধীকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, যদি কোনো শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নোট বই অথবা গাইড বই কিনতে বাধ্য করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, সরকার শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিপূরক ও শিক্ষা সহায়িকা বই প্রকাশের অনুমতি দেবে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের পরিপূরক ও শিক্ষা সহায়িকা বই কিনতে বাধ্য করেন, তবে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খসড়া আইনে আরও বলা হয়েছে, স্কুল চাইলে অভিভাবকদের অনুমতি সাপেক্ষে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারে। এই ক্লাসগুলো স্কুলের নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে বা পরে আয়োজন করতে হবে।

চাকরিপ্রার্থী, ভর্তিচ্ছুক ও ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে ইচ্ছুকদের জন্য স্থাপিত কোচিং সেন্টার অবশ্য এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

খসড়া আইনে শিক্ষার্থীদের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করলে তা শিক্ষকদের অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার কিংবা সরকার নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের (যেমন: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) অনুমোদন নিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী একটি শিক্ষা আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। শিক্ষানীতির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য নতুন আইন প্রণয়নের ব্যাপারে এতে একটি প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত খসড়া আইন তৈরির জন্য শিক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির একটি উপ-কমিটিকে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভায় শিক্ষা আইনের একটি খসড়া পাঠায়। কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট পড়ানোকে ‘শ্যাডো এডুকেশন’ নামে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে খসড়াটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

‘Selling child for treatment tragic violation of rights’

NHRC takes suo motu cognizance of TDS report, vows to ensure rights of the family, asks Dinajpur DC to probe and submit report by Oct 15

13m ago