বেক্সিমকো-সেরাম: অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন দেশে তৈরির আলোচনা

বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে আলোচনা করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে আলোচনা করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।

ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। যার ফলশ্রুতিতে তারা উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশি এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, সেরামের কাছে বেক্সিমকো জানতে চেয়েছে যে, দেশে কী পরিমাণ ভ্যাকসিন ডোজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং সেগুলো কোথায় সরবরাহ করা হবে।

পাপন গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্যে বড় আকারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এ ধরনের বিনিয়োগ করার আগে আমাদেরকে এ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্যে উৎপাদন করলে তা বাস্তবসম্মত হবে না। আমরা এখন তাদের কাছ (সেরাম) থেকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি বেক্সিমকো দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে, তাহলে তা দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।’

বেক্সিমকো কি বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন আমদানি করে তা এখানে অ্যাম্পুলে ঢোকাতে পারবে কি না, জানতে চাইলে পাপন বলেন, ‘এটি আমাদের জন্যে বাস্তবসম্মত বিকল্প নয়’।

সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনেওয়ালা সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারা চাহিদার সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য অন্যান্য দেশেও ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।

গত শুক্রবার দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মাঝেই একটি ঘোষণা আসছে।’

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনার (গ্যাভি) আওতায় কোভ্যাক্স সুবিধার প্রকল্পটি সেরামের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা নোভাভ্যাক্সের মোট এক দশমিক এক বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল, যার মাঝে ২০০ মিলিয়ন ছিল প্রতিশ্রুত, আর বাকিটা বিকল্প হিসেবে।

প্রকল্পটি ভারতের বরাদ্দ বাদ দিয়েই ফেব্রুয়ারি থেকে মে’র মধ্যে সেরামের কাছ থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু, তারা এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮ দশমিক দুই মিলিয়ন ভ্যাকসিন পেয়েছেন। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশের প্রায় ছয় দশমিক আট কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা রয়েছে।

সেরামের কাছ থেকে কেনা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে, সেরাম ইনস্টিটিউট টানা ছয় মাস ধরে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় টিকাদান কর্মসূচিটি বাধার মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ সেরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন কিনেছিল। তবে, এ পর্যন্ত দুই চালানে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে দেশে।

সেরাম প্রথম চালানের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন ঠিকমতোই পাঠিয়েছিল। কিন্তু, দ্বিতীয় চালানে তারা মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠায়। এরপর সেরাম বাংলাদেশকে আর কোনো ভ্যাকসিন পাঠায়নি। পাশাপাশি ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ।

কাঁচামালের স্বল্পতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত সরকার ভ্যাকসিনের রপ্তানির ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে।

সেরাম প্রতি মাসে ভ্যাকসিনের ছয় কোটি ৫০ লাখ ডোজ উৎপাদনে সক্ষম।

বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকাকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং এ টিকাগুলোকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য আলাপ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এরকম উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। রাষ্ট্র ও শিক্ষাবিদরা এ ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে যত বেশি সংযুক্ত থাকবেন, ততই দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত হবে।’

সরকার ইতোমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশে তাদের কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের উৎপাদন করার অনুমোদন দিতে।

গত মাসে যুক্তরাজ্য-সুইডেন ভিত্তিক এই বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানটির কাছে বীজ থেকে তা উৎপাদনের প্রযুক্তি অথবা আমদানি করে প্যাকেজিং করার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

তবে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে থেকে এখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ১৫টি দেশে ২০টিরও অধিক সরবরাহ অংশীদার, ২০টিরও বেশি বিশ্লেষণী পরীক্ষাগার এবং যুক্তরাজ্যে তিনটি ও ইউরোপের বাকি দেশগুলোতে পাঁচটিরও বেশি উৎপাদন কেন্দ্র।

দক্ষিণ এশিয়াতে সেরাম হচ্ছে তাদের একমাত্র উৎপাদন অংশীদার।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান রেনাটা লিমিটেড সরকারের কাছ থেকে মডার্নার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আমদানি করার অনুমতি চেয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘যদি বাংলাদেশে মডার্না ভ্যাকসিন আনা হয়, তবে তা শূন্যের চেয়েও নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা শুধুমাত্র ঢাকাতেই করা যাবে। ঢাকার বাইরে এটিকে সংরক্ষণ করার মতো অবকাঠামো বর্তমানে আমাদের নেই।’

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

আরও পড়ুন:

নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যের জীবন বাঁচানোর লড়াই

সঠিকভাবে মাস্ক না পরলে ঝুঁকি আড়াই গুণ বেশি

করোনাভাইরাস মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়: ল্যানসেট

টিকা সংকট নিরসন: নতুন উৎস রাশিয়া ও চীন

‘আগামী মাস থেকে স্পুতনিকের ৪০ লাখ ডোজ টিকা আসতে পারে’

দেশে রাশিয়ার ‘স্পুতনিক-ভি’ ভ্যাকসিন অনুমোদন

শিগগির ভারত থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছে না বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় রাশিয়া

টিকার বিকল্প উৎস সন্ধানে বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে ৬০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় চীনের সিনোফার্ম

ভারত সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারছে না সেরাম

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়ায় অনিশ্চয়তা: অন্য উৎস খুঁজছে সরকার

Comments

The Daily Star  | English

Celebrity politicians: A diverse history

Political parties who have committed to participating in the upcoming 12th parliamentary election are preparing in full swing. The Awami League and Jatiya Party have announced their list of nominees, and interestingly, it includes a handful of celebrities

2h ago