জাবির উন্নয়ন প্রকল্প ‘তদারকিতে’ ছাত্রলীগ!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ এনে প্রকল্প পরিচালককে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ এনে প্রকল্প পরিচালককে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীণ ১৮নং ছাত্রী হলের অফিসকক্ষে প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দীনকেকে অবরুদ্ধ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের মধ্যস্ততায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেখান থেকে চলে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

যদিও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী দেওয়ার প্রতিবাদ জানালে হালকা ‘কথা কাটাকাটি’ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালককে অবরুদ্ধ করেননি তারা, কেবল জবাবদিহি চেয়েছেন।   

সোমবার টেকনিক্যাল কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে ক্যাম্পাসে আসেন প্রকল্প পরিচালক। খবর পেয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার নেতৃত্বে সন্ধ্যায় ওই হলে যান সহ-সভাপতি বায়োজিদ রানা কলিংস ও মিজান, যুগ্ম সম্পাদক আফফান হোসাইন আপন, সাংগঠনিক সম্পাদক পঙ্কজ দাস ও তারেক হাসান, উপ-দপ্তর সম্পাদক এম মাঈনুল হোসাইন রাজনসহ সিনিয়র নেতারা।

এ সময় হলের বাইরে জুনিয়র নেতাকর্মীদের শোডাউন দিতে দেখা যায়।

‘অবরুদ্ধ’ করার বিষয় অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা নির্মাণাধীন ওই হলের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। কাজের মান নিয়ে প্রকল্প পরিচালককে প্রশ্ন করলে উনি আমাদের সঙ্গে ‘খারাপ ব্যবহার’ করেন। তখন আমরা তদারক কমিটিকে ডাকতে বলি। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষকরা এসে বিষয়টি মীমাংসা করেন।’

কী ধরনের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি নির্মাণকাজে নিম্নমানের রড ও ইট ব্যবহার হচ্ছে। যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো হাত দিয়ে আঘাত করলেই ভেঙ্গে যাচ্ছে।’

তবে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিনকে ঈদ সালামির জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। যার ধারাবাহিকতায় গত মাসে ক্যাম্পাস ও ঢাকাতে তার সাথে দেখা করেন ছাত্রলীগ নেতারা। এছাড়া শিক্ষকদের কাছেও এসেছেন কয়েকবার। কারও কাছে তেমন সবুজ সংকেত না পেয়ে প্রকল্প পরিচালককে অবরুদ্ধ করে প্রশাসনকে চাপ দিতে চেয়েছেন তারা।’

কিন্তু রাত ১১ টার দিকে থেকে প্রকল্প পরিচালক বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের জানান, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।’

তবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে ছাত্রলীগের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যথাযথ জিনিসপত্র দিয়েই নির্মাণকাজ চলছে। আর তারা নির্মাণসামগ্রী দেখার কে? এগুলো দেখার জন্য ইউজিসি, শিক্ষামন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেকেই আছেন।’ 

এদিকে প্রকল্প পরিচালককে অবরুদ্ধ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্পের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী ফাহমিদা মাছউদ বলেন, ‘অবরুদ্ধ করা হয়েছে কিনা আমি জানি না। মিটিং শেষে আমি চলে এসেছি। তবে ক্যাম্পাসে খারাপ কিছু হয়েছে বলে আমি শুনতে পেয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘গত ২০ এপ্রিল প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে ঢাকায় দেখা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা।

তিনি আরও জানান, ‘এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন মেহেদী ইকবালের বাসায় কয়েক দফা বৈঠক করে সভাপতি জুয়েল রানাসহ নেতাকর্মীরা। ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের কমিশন পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।’

তবে সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবাল তার বাসায় বৈঠকের কথা অস্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের একই প্রকল্প থেকে ১ কোটি টাকা কমিশন নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর আগস্টে ক্যাম্পাস থেকে লাপাত্তা হন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল। ওই বছরের নভেম্বরের ৪ তারিখে কেন্দ্রীয় দপ্তরে তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর এককভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনা করে আসছিলেন সভাপতি জুয়েল রানা। কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এসে ছেলেদের ৭টি হলের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে সভাপতি জুয়েল রানাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এরপর সভাপতি ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। তবে ঈদের আগে আবার সভাপতিকে ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে।

Comments