প্রবাসে

মরিশাসে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নসহ মানি ট্রান্সফার এক্সচেঞ্জ বন্ধে বিপাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

মরিশাসে প্রায় দুই মাসের লকডাউন তুলে নেওয়ার দুই দিনের মাথায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মানি ট্রান্সফার এক্সচেঞ্জগুলো। গত শনিবার ছুটির দিনে প্রতিটি শাখায় প্রবাসীদের প্রচুর ভিড়ে করোনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির সরকার এই কঠোর ব্যবস্থা নেয়। ফলে ঈদকে সামনে রেখে দেশে টাকা পাঠাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বন্ধ থাকায় বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারা। সংকট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
মরিশাসে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সামনে অপেক্ষায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: স্টার

মরিশাসে প্রায় দুই মাসের লকডাউন তুলে নেওয়ার দুই দিনের মাথায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মানি ট্রান্সফার এক্সচেঞ্জগুলো। গত শনিবার ছুটির দিনে প্রতিটি শাখায় প্রবাসীদের প্রচুর ভিড়ে করোনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির সরকার এই কঠোর ব্যবস্থা নেয়। ফলে ঈদকে সামনে রেখে দেশে টাকা পাঠাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বন্ধ থাকায় বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারা। সংকট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসে নানা পেশা ও ব্যবসা নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি আছেন। তারমধ্যে প্রায় ৮ হাজার নারী কর্মী, যাদের বেশিরভাগই গার্মেন্ট কর্মী। মরিমাস থেকে বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে মানি ট্রান্সফার পরিষেবাগুলো হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম এবং রিয়া।

প্রবাসী সংগঠকরা জানান, তিন মাধ্যমে মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত শক্তিশালী সার্ভিস নেটওয়ার্কের কারণে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নই বেশিরভাগ প্রবাসীর প্রথম পছন্দ। প্রবাসীদের কাছে "ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যাংক' হিসেবেই এর বেশি পরিচিতি।

একচেঞ্জ সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে গত ১০ মার্চ থেকে দেশটিতে লকডাউন জারি করা হয় এবং ৩০ এপ্রিল লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়। প্রায় দুইমাস লকডাউনের কারণে বাংলাদেশি কর্মীরা সময় মতো দেশে টাকা পাঠাতে পারেননি। অবশ্য এ সময় ব্যাংক খোলা ছিল এবং মাঝে সপ্তাহ খানেক ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও রিয়া এক্সচেঞ্জও খোলা ছিল। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ প্রবাসীর এক্সচেঞ্জে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই লকডাউন ওঠে যাওয়ার প্রথম দুই দিনেই বিশেষ করে শনিবার মে দিবসে এক্সচেঞ্জগুলোতে বেশি প্রবাসীর ভীড় হয়। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের শাখাগুলোতে। ফলে একসঙ্গে ১০ জনের উপস্থিতির সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষিত হয়। নিয়ম লঙঘন করায় মরিশাস সরকারের কভিড-১৯ প্রতিরোধ কমিটি রবিবার থেকে এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

‘মরিশাস সরকার করোনা প্রতিরোধে শুরু থেকেই খুব কঠোর অবস্থানে আছে। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘনে কোনো ছাড় নেই, কঠিন শাস্তিও পেতে হয়। খোলার প্রথম দুই দিনে টাকা পাঠাতে গিয়ে প্রবাসীরা মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্বে থাকাটা মোটামুটি মানলেও ১০ এর কয়েকগুণ বেশি উপস্থিতিতেই বিপত্তিটা ঘটে যায়’,  বলেন প্রবাসী সংগঠক মোহাম্মদ হাফিজ।

এক্সচেঞ্জভিত্তিক ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও পোস্ট অফিসের রিয়া বন্ধ থাকলেও মরিশাস কর্মাশিয়াল ব্যাংকের মানিগ্রাম পরিষেবা খোলা আছে। তবে অভ্যাস ও আস্থার কারণে  ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন নির্ভর বেশিরভাগ প্রবাসী দেশে টাকা পাঠানোর ভোগান্তির সঙ্গে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

রাজধানী পোর্ট লুইসের বাংলাদেশি বেকারি কর্মী মো. ইউসূফ বলেন, ‘আমার মা গুরুতর অসুস্থ।  তার চিকিৎসার জন্য  ১০ হাজার মরিশিয়ান রূপি (বাংলাদেশি টাকায় ২১ হাজার) দেশে পাঠাতে রবিবার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যাংকে গিয়ে ফিরে আসতে হলো। কখন খুলবে কেউ জানে না।’

বাংলাদেশি গার্মেন্টস কর্মী নাটোরের হাসনা হেনাও মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাতে পারেনি।

181495182_513166283427340_2237248337012283020_n.jpg
মরিশাসে মানি টান্সফার এক্সচেঞ্জ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও রিয়া বন্ধ। ছবি: স্টার

গার্মেন্টস কর্মী নেত্রকোণার রিনা আক্তার জানান, বাচ্চাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা ও বিশেষ প্রয়োজনে টাকা পাঠাতে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে গিয়ে বন্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে।

একই কথা জানান ফরিদপুরের মোহাম্মদ মুজাহিদ মিনা। তিনি বলেন, আমি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকেই দেশে টাকা পাঠাই, বাড়ির পাশে থেকেই টাকা তুলতে পারে। ব্যাংকটি এখানে হঠাৎ বন্ধ হওয়াতে বিপাকে পরেছি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসীদের অস্থিরতা ও অসচেতনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। তারা বলছেন, সবাই একসঙ্গে একদিনে হুমড়ি খেয়ে না পড়লে এমন পরিস্থিতি হতো না। সাধারণ প্রবাসী ও প্রবাসী সংগঠনগুলো এক্সচেঞ্জ খোলার বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে সংকট নিরসনে দ্রুত উদ্যোগী হয় বাংলাদেশে হাইকমিশন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ মরিশাস সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে এবং বাংলাদেশিদের ভোগান্তির বিষয়টি তুলে ধরে।

মরিশাসে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রায় দুই মাসের লকডাউন  আর সামনে ঈদকে ঘিরে উপস্থিতির নিয়মটা রক্ষা হয়নি বলে আমরা তাদের বুঝিয়েছি। মানবিক বিবেচনা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতিতে ওয়েস্টার্ন  ইউনিয়নসহ মানি ট্রান্সফার এক্সচেঞ্জগুলো খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা যুক্তি মেনেছেন এবং আন্তরিকভাবে আশ্বাস দিয়েছেন যে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটির আজকালকের বৈঠকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করি ইতিবাচক খবর পাবো।’

মানি ট্রান্সফার এক্সচেঞ্জ আবার খোলা হলে স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব ও উপস্থিতি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ করেছেন হাইকমিশনার।

এজাজ মাহমুদ: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago