পিএসজিকে হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটি
কাজ আগেই এগিয়ে রেখেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু ওই ব্যবধান নিয়ে তৃপ্ত থাকেনি তারা। দাপট দেখিয়ে রিয়াদ মাহরেজের জোড়া গোলে তারা তুলে নিল অসাধারণ জয়। পিএসজিকে বিদায় করে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল ইংলিশ ক্লাবটি।
মঙ্গলবার রাতে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে জিতেছে ম্যান সিটি। আগের দেখায় পিএসজিকে তাদের মাঠে ২-১ গোলে হারিয়েছিল তারা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতে শিরোপার মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে ম্যানচেস্টারের দলটি। ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের এক মৌসুমে ১১টি ম্যাচ জেতার রেকর্ডও গড়েছে তারা। এই কীর্তি নেই ইংল্যান্ডের আর কোনো দলের।
সেমির বাধা পেরোতে শুধু জয় পেলে চলত না পিএসজির। ফরাসি ক্লাবটিকে নির্দিষ্ট ব্যবধানের সমীকরণ মেলাতে হতো। কিন্তু কিলিয়ান এমবাপের অনুপস্থিতিতে তা পারেনি তারা। সিটির গোলমুখে নেইমাররা ১২টি শট নিলেও একটিও ছিল না লক্ষ্যে। অন্যদিকে, রক্ষণ জমাট রেখে খেলা স্বাগতিকদের ১২ শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। ম্যাচের আগে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয় ম্যানচেস্টারে। মাঠের সর্বত্র শিলা পড়ে থাকায় শুরুতে মানিয়ে নিতে কিছুটা অসুবিধা হয় খেলোয়াড়দের।
গত আসরের ফাইনালিস্ট পিএসজি প্রতিপক্ষের মাঠে শুরুতে ছিল উজ্জীবিত। বল দখলে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে তারা। সপ্তম মিনিটে তাদের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশিও বাজান রেফারি। কিন্তু ভিএআরের সাহায্য নিলে দেখা যায়, বল আলেকসান্দার জিনচেঙ্কোর ঘাড়ে লেগেছিল। ফলে পরিবর্তিত হয় সিদ্ধান্ত।
চার মিনিট পর পিএসজির ফাইনালে ওঠার পথ ভীষণ বন্ধুর করে দেন মাহরেজ। পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সের ভেতর থেকে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। সিটির গোলরক্ষক এদারসন চমৎকার গোল-কিকে খুঁজে নেন জিনচেঙ্কোকে। মাঝমাঠের কিছুটা সামনে থেকে বল নিয়ে দৌড়ে ইউক্রেনের এই ডিফেন্ডার খুঁজে নেন কেভিন ডি ব্রুইনকে। তার শট অতিথিদের অধিনায়ক মার্কুইনোস আটকে দিলেও পেয়ে যান মাহরেজ। নিখুঁত ফিনিশিংয়ে পিএসজির গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করেন তিনি।
ছয় মিনিট পর সমতায় ফিরতে পারত প্যারিসিয়ানরা। কিন্তু হতাশায় পুড়তে হয় তাদের। আনহেল দি মারিয়ার হাওয়ায় ভাসানো বলে মার্কুইনোসের হেড ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। দুই মিনিট পর নিজেদের ভুলে গোল হজম করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল সিটি। বার্নার্দো সিলভার কাছ থেকে বল কেড়ে নেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার দি মারিয়া। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া শট চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। অথচ গোলপোস্ট ছিল ফাঁকা। বেকায়দা অবস্থায় ছিলেন এদারসন।
৩৬তম মিনিটে আন্দার হেরেরার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাকে বলের যোগান দিয়েছিলেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ভীতি ছড়ালেও নিশ্চিত কোনো সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। সিটির দুই সেন্টার-ব্যাক রুবেন দিয়াস ও জন স্টোনস ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। প্রথমার্ধের শেষদিকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। মাহরেজের ডান পায়ের কোণাকুণি শট নাভাস রুখে না দিলে ব্যবধান বাড়াতে পারত তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা মাঠে গড়ানোর পরপরই ম্যাচের লাগায় মুঠোয় নেয় সিটি। ৫৪তম মিনিটে ফিল ফোডেনের জোরালো শট রুখে দিয়ে পিএসজিকে লড়াইয়ে রাখেন নাভাস। তবে কিছুক্ষণ পরই লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন মাহরেজ। ৬৩তম মিনিটে ডি ব্রুইনের সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফোডেন। এরপর বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস করেন তরুণ এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। বাকিটা অনায়াসে সারেন আলজেরিয়ার ফরোয়ার্ড মাহরেজ।
এরপর উত্তেজনা ছড়ায় মাঠে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দি মারিয়া ৬৯তম মিনিটে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন। সিটির অধিনায়ক ফার্নান্দিনহোর পায়ে অযথা পাড়া দিয়েছিলেন তিনি। পিএসজির ঘুরে দাঁড়ানোর যে সম্ভাবনা নিভু নিভু করে জ্বলছিল, তা শেষ হয়ে যায় তখন। পরে আরেকটি ফাউলকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতেও জড়ান দুদলের কয়েকজন।
সিটির জয়ের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। ৭৭তম মিনিটে ফোডেনের শটে নাভাস পরাস্ত হলেও বল বাধা পায় পোস্টে। তিন মিনিট পর তার আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন পিএসজির এই গোলরক্ষক। বাকি সময়ে আর কোনো গোল হয়নি। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ফাইনালের টিকিট পাওয়ার উল্লাসে মাতোয়ারা হয় সিটি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল হবে আগামী ২৯ মে ইস্তানবুলে। সেখানে গার্দিওলার ম্যান সিটির প্রতিপক্ষ হবে রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা চেলসি। এই দুটি ক্লাব বুধবার রাতে পরস্পরকে মোকাবিলা করবে।
Comments