বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতারা তৃণমূলে ফিরছেন?

Mamata.jpg
তৃণমূল নেত্রী মমতার প্রকাশ্য অভিমত ঘিরে রাজ্য রাজনীতি যথেষ্ট সরগরম হতে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত

‘আসুক না। কে বারণ করেছে? এলে স্বাগত’ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যারা বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন, তাদের উদ্দেশে এই তিনটি বাক্য উচ্চারণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রীর এই অভিমত প্রকাশ্যে আসার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গেছে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের আগে যেসব তৃণমূল কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়ে ভোটে লড়লেন, তাহলে কি তারা আবার তৃণমূলে ফিরে আসছেন? এই প্রশ্নটি এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত তিন-চার বছরে বেশ কিছু নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান। তারও আগে, একদা তৃণমূলে প্রায় দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে সেই সময়ে পরিচিত মুকুল রায় যোগ দেন বিজেপিতে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান অর্জুন সিং, নিশীথ প্রামাণিক, সৌমিত্র খান, লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এরা সবাই লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে লড়েন এবং জেতেন।

লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ১৮টি আসন জেতে। তারপর থেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার ধুম পড়ে যায়। বর্ধমানের সংসদ সদস্য সুনীল মণ্ডল বিধানসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি প্রচারসভায় বিজেপিতে যোগ দেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে বহু দল-বদল ঘটেছে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদির আগে অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রকাশ্য জনসভায় এভাবে দল-বদল হয়নি।

বিধানসভা ভোটের আগে মমতার মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটে শুভেন্দু নন্দীগ্রাম থেকে হারান খোদ মমতাকে। তবে, রাজীব হাওড়ার ডোমজুর থেকে জিততে পারেননি। তারা ছাড়াও উত্তর চব্বিশ পরগণার নোয়াপাড়ায় সুনীল সিং, জগদ্দলে অরিন্দম ভট্টাচার্য, হুগলীর উত্তরপাড়াতে প্রবীর ঘোষাল, সিপিআইএম থেকে নদিয়ার বঙ্কিম ঘোষ (বামফ্রন্টের মন্ত্রী ছিলেন), বর্ধমানের আইনুল হক, কোচবিহারের মিহির গোস্বামী (জিতেছেন), মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু রায় প্রমুখ বিজেপিতে যোগ দেন।

ভোটের সময়কাল থেকেই ভোটের পর মুকুল ফিরে আসতে পারেন তৃণমূলে- এই খবরে রাজনীতির জগতে বেশ শোরগোল ছিল। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই প্রকাশ্য অভিমতের গোটা বিষয়টি ঘিরে রাজ্য রাজনীতি যথেষ্ট সরগরম হতে শুরু করেছে। লোকসভা ভোটের আগে যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন, তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য অর্জুন সিংয়ের দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে মমতার প্রশাসন খুব সক্রিয় হয়েছিল। ভাটপাড়া নৈহাটি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের অতীতের (তখন অর্জুন তৃণমূলেই) কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তার বাড়িতে একাধিকবার পুলিশ যায়। তাকে অহেতুক হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অর্জুন সিং দাবি করেন। ওই অভিযোগে অর্জুনের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। ভোটের অল্প কিছু দিন আগে সেই ব্যক্তি জামিন পান।

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল ছাড়ার পরেও তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল এবং স্বয়ং মমতা। তবে, রাজীব নিজে নাকি তৃণমূলের মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের কিছু পরিচয়কে ব্যবহার করে পুলিশের একটি অংশকে নিজের পক্ষে ভোটে ব্যবহার করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নাকি বিদায়ী মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর কানে পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

উত্তর চব্বিশ পরগণার নোয়াপাড়ার সুনীল সিং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, যদিও তৃণমূল বিধায়ক হিসেবে পদত্যাগ করেননি। শোনা যায়, সুনীল যাতে নোয়াপাড়া থেকে বিজেপির টিকিট না পান, সেজন্য বিজেপিরই একটা অংশ সক্রিয় ছিল। সেই সময়েই নাকি সুনীলের বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে ফিরে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

2h ago