যুক্তরাষ্ট্র থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সব টিকা পেতে তদবির করছে ভারতীয়রা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে সরকারের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
আজ বুধবার আব্দুল মোমেন তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এটি (ভ্যাকসিন) পাওয়ার ব্যাপারে অনেক আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল আলম দেশটির সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত বৈঠকে বাংলাদেশে অক্সিজেন সরবরাহসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা শুনেছি- সম্প্রতি ভারত এবং ব্রাজিলে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে, সে কারণে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে ওই দেশগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘ভারতীয় অভিবাসীরা মার্কিন সরকারের সঙ্গে তদবির করে যাচ্ছে, যাতে তারা ভারতে ভ্যাকসিনের পুরো পরিমাণ পাঠায়। তারা খুব শক্তিশালী। একজন নারী নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
তিনি বাংলাদেশি অভিবাসীদের এ ব্যাপারে আমেরিকান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কথা বলছেন, যাতে বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগে তারা গুরুত্ব বুঝতে পারে।
ড. মোমেন বলেন, ‘অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও করোনা ভ্যাকসিন পাবে, এ ব্যাপারে আমেরিকা আশ্বস্ত করেছে।’
সম্প্রতি জলবায়ু সম্পর্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি যে, যখন আমরা বেশিরভাগ নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার শেষ পর্যায়ে পৌঁছতে পারব, তখন অবশিষ্ট ভ্যাকসিনগুলো আমরা যেকোনো উপায়ে বিতরণ করব।’
ড. মোমেন বলেন যে, তারা ইউরোপীয় কিছু দেশ থেকে ভ্যাকসিন পেতে এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন, যা তারা ব্যবহার করছে না।
তিনি বলেন, ‘তবে তাদের মোট ভ্যাকসিনের পরিমাণ আকারে খুব কম, যেখানে আমাদের প্রতিদিন ২ লাখ টিকা প্রয়োজন, এই ফ্রন্টে সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল নয়।’
এর আগে, মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ঈদুল ফিতরের আগেই ভ্যাকসিন ডেলিভারি দিতে চীনা সরকার কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ভ্যাকসিন ঈদের আগেই ঢাকায় আসা শুরু করবে।’ অন্যদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নির্দিষ্ট করে জানিয়েছেন ১০ মে ভ্যাকসিন আসবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনিস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে সরকার তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি জানান, তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ৩০ লাখ ভ্যাকসিন চেয়েছে ভারতের কাছে। উত্তরে তারা জানিয়েছে, ভ্যাকসিন পাওয়া মাত্রই তারা আমাদের সরবরাহ করবে।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বলেছেন, করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে রক্ষায় সরকার যেকোনো মূল্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও ভ্যাকসিন আনছি, কত টাকা লাগবে সেটা কোনো বিষয় নয়।’
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড ব্র্যান্ড নামে বিক্রিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে।
এটি জানুয়ারি থেকে শুরু করে ছয় মাসের জন্য তিন কোটি ডোজ সরবরাহের জন্য স্থানীয় ফার্মা জায়ান্ট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে।
ভারতে বর্তমান উচ্চ চাহিদা থাকায় ভ্যাকসিনের বাকি ডোজের সরবরাহ স্থগিত রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ কোভিশিল্ডের ৩৩ লাখ ডোজ পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে, যেকোনো দেশে ভারতের পাঠানো সর্বাধিক পরিমাণ হলো ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া বাংলাদেশে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। ভ্যাকসিনের ব্যাপারে দুই সরকারের মধ্যকার চুক্তির জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা তাদের বিষয় তুলে ধরেছেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।’
Comments