মমতার জয়ে তিস্তা চুক্তি নিয়ে খুব বেশি আশা নেই ঢাকার

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ছবি : সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন। এদেশের মানুষ তাকে এই পরিচয়ে চেনার কারণ, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় মমতার আপত্তির কারণেই চুক্তিটি হয়নি।

এখনও ভারতের উচ্চপদস্থ কেউ ঢাকা সফরে এলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো- তিস্তা চুক্তি কবে হবে?

প্রতিবারই এর জবাবও থাকে একই- এটা নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের ওপর। কারণ ‘ভারতের সংবিধান আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের এখতিয়ার নিশ্চিত করেছে।’

বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভারতের শাসকদল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিল। এই প্রচারণা এমন ইঙ্গিত দিয়েছিল যে বিজেপি জিতলে তিস্তা চুক্তির একটা গতি হবে।

বিজেপি এই নির্বাচনে ৭৭টি আসনে জয় পেয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তারা জিতেছিল তিনটি আসনে। সে তুলনায় অনেকটাই এগিয়েছে তারা। তারপরেও মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১৩ টিতে জয় পেয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতাকে।

গতকাল বুধবার মমতাকে পাঠানো এক বার্তায় মোমেন বলেন, ‘এই জয় দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। এটি যেকোনো অনিষ্পন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে আপনার সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতির ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’

তবে কী সত্যিকার অর্থেই বহুল আলোচিত তিস্তা ইস্যুর সমাধান হতে যাচ্ছে?

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনের অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে কে ক্ষমতায় থাকল তার ওপর তিস্তা চুক্তি নির্ভর করে না। দীর্ঘকাল ধরেই বিষয়টি ঝুলে আছে। মনে হচ্ছে আরও অনেক দিন এমনই থাকবে।

তৌহিদ হোসেন গত সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি এখন কেবল পানির মধ্যে আটকে নেই। এটা একটা রাজনৈতিক বিষয়ও হয়ে উঠেছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও তারা বাংলাদেশের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের দিকে এগোতে না। কারণ সেটাকে মমতা ব্যানার্জী একটা রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে নিতেন।’

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে মমতা যে যুক্তি দিয়ে থাকেন তা উল্লেখ করে সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘মমতা বলেন, দেওয়ার মতো পানি তিস্তায় নেই। যা একেবারেই ঠিক না।’

তিস্তা তুলনামূলকভাবে ছোট একটি নদী। শুকনো মৌসুমে এর পানি কমে আসবে এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক আইনে বলা আছে, ভাটির দেশ  উজান থেকে আসা পানির ভাগ পাবে। সেক্ষেত্রে আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে তিস্তার পানি ভাগাভাগি হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসীনের বক্তব্যও একই। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তিস্তা চুক্তি হতো- এমনটা আমি মনে করি না। কারণ এটা কেবল রাজ্য সরকারের না, কেন্দ্রীয় সরকারের ইস্যুও বটে। কারণ যেকোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি সই করে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জী বলে আসছেন যে শুকনা মৌসুমে তিস্তায় খুব অল্প পানি থাকে। কিন্তু এর আরেকটি কারণ হলো, ভাটির দিকের পানি আটকানোর পাশাপাশি পানি প্রবাহ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সিকিমে তিস্তার ওপর একটি বাঁধ বানিয়েছে।’

আমেনা মোহসীনের ভাষ্য, যদি তিস্তায় কোনো বাঁধ না থাকে, তাহলে পানি আরও বেশি থাকবে। মমতা তখন এই যুক্তি দিতে পারতেন না।

সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে কোন দল ক্ষমতায় আছে তার ওপর তিস্তা চুক্তি নির্ভর করে না বলে মনে করেন আমেনা মোহসীন।

তার মতে, ক্ষমতায় যে দলই থাকুক, তিস্তা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের ইস্যু হয়েই থাকবে।

আমেনা বলেন, ‘আমরা যদি তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিকে ঠিকঠাক চিহ্নিত করতে চাই, তাহলে আঞ্চলিক পর্যায়ে দেন-দরবার করা দরকার। নজর দিতে হবে নদীর অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার দিকে। এ ক্ষেত্রে আমাদের উজানের দেশ হিসেবে চীনকেও যুক্ত করা উচিত।’

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক তৌহিদ হোসেন ও আমেনা মোহসীন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কারণ বিজেপির ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিপরীতে তৃণমূলের একটি ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টিও উঠে আসে তাদের কথায়।

আমেনা মোহসীন বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি রাজ্য। সুতরাং সেখানে কোনো ধর্মনিরপেক্ষ দল ক্ষমতায় থাকার বিষয়টা ইতিবাচক।’

তার পর্যবেক্ষণ, বিজেপি প্রবল মেরুকরণের রাজনীতির চর্চা করে আসছে।

‘যে রাজনীতি মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, সমাজের যে কোনো অংশের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেয়, তার থেকে অবশ্যই আমরা বাইরে থাকব,’ যোগ করেন তিনি।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago